|
|
|
|
গেইল সাইক্লোনে ভেসে উঠল বাইশ বলের বিস্ফোরণ |
ব্র্যাডম্যান কিন্তু এখনও ‘ডন’ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তিরিশ বলে ক্রিস গেইলের তোলা ঘূর্ণিঝড়েই আবার নতুন করে ভেসে উঠছে প্রায় বিরাশি বছর আগের ইনিংসটা। যে ইনিংস ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে না থেকেও বাইশ বলের বিস্ময় হিসাবে ইতিহাসের পাতায় অমর! বিশ্বের দ্রুততম সেঞ্চুরিটা করে গেইল রেকর্ড বই (যদিও ডনের মতো এই রেকর্ডও আইসিসি-র স্বীকৃত নয়) নতুন করে লিখেছেন ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেট লোকগাথা? সেখানে যে তিনি এখনও দ্রুততম সেঞ্চুরির দৌড়ে সেই মানুষটার পিছনে, দুনিয়া যাঁকে ক্রিকেটের ‘ডন’ বলে মানে!
সেই সময়কার খবরের কাগজের ক্লিপিংস-সহ ডনের ব্যাটিং দাদাগিরির ওই নমুনা গেইলের দৌলতেই আবার ফিরে এসেছে প্রচারের আলোয়।
ঘটনাটা এই রকম। ১৯৩১ সালের ২ নভেম্বর নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাম ব্ল্যাকহিথ-এ উদ্বোধন হয় নতুন কংক্রিট পিচ। সেই উপলক্ষ্যে লিথগো দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন ব্র্যাডম্যান এবং তাঁর নিউ সাউথ ওয়েলস শেফিল্ড শিল্ড দলের সঙ্গী অস্কার ওয়েন্ডেল বিল। ব্র্যাডম্যান পরে বলেছিলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন ছিল। ওই রকম শান বাঁধানো উইকেট এর আগে দেখিনি। একেবারে পাটা আর অসম্ভব মসৃণ ছিল।” |
ডন ব্র্যাডম্যান |
ক্রিস গেইল |
|
|
২২ বলের তাণ্ডব |
৩০ বলের তাণ্ডব |
৬,৬,৪,২,৪,৪,৬,১,৬, ৪,৪,৬,
৬,৪,৬,৪,৬,৬,১, ৪,৪,৬। |
০,০,১,৪,৪,০,৪,৪,০,৪,১,৬,৬,৪,০,৬,৬,
৪,৬,১,৬,০,৬,৬,৪,৬,৬,০,১,৬। |
|
সেই পিচে ব্যাট করার জন্য যদি কিংবদন্তির হাত নিশপিশ করে থাকে, তবে তাঁর তেতে ওঠার দ্বিতীয় কারণটা ছিলেন লিথগোর বোলার বিল ব্ল্যাক। যিনি এক মাস আগে এক খেলায় ব্র্যাডম্যানকে ৫২ রানে আউট করার পর থেকে তাই নিয়ে বড়াই করেই চলেছিলেন। ওয়েন্ডেল পরে জানিয়েছিলেন যে ব্ল্যাককে দেখার পর ব্যাট করতে নামার সময় ব্র্যাডম্যান তাঁকে শুধু বলেছিলেন, “মনে হচ্ছে আজকে চালাব। আই থিঙ্ক আই উইল হ্যাভ আ গো।”
এর পর যা ঘটেছিল সেটাকে স্রেফ নৃশংসতা বলেই মনে রেখেছেন নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা ওয়েন্ডেল।
সে যুগে ক্রিকেটে ওভার হত আট বলে। এবং ব্র্যাডম্যান পরে ম্যাচের প্রথম তিনটে ওভার সম্পর্কে যা বলেছিলেন সেটা এই রকম-“প্রথম ওভারে ৩৩ করি। তিনটে ছক্কা, তিনটে চার, একটা দুই আর শেষ বলে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক রেখে দিই। দ্বিতীয় ওভারে ৪০ তুললাম। চারটে ছক্কা আর চারটে চার মেরে। তৃতীয় ওভারে ওয়েন্ডেলের স্ট্রাইক ছিল। ও এক রান নিয়ে আমাকে স্ট্রাইক দেয়। আমি দু’টো ছক্কা মারার পর একটা সিঙ্গলস নিই। পঞ্চম বলে সিঙ্গলস নিয়ে ওয়েন্ডেল আবার আমাকে স্ট্রাইক দেয়। দু’টো ওভারবাউন্ডারি আর একটা বাউন্ডারি মেরে আমি ইনিংসটা শেষ করি।”
সব মিলিয়ে ২২ বলে সেঞ্চুরি!
সেই ম্যাচে ২৫৬ করেছিলেন ব্র্যাডম্যান, ১৪টা ছক্কা আর ২৯টা চার মেরে। যে ‘সাইকস ৪ ক্রাউন উইলো’ ব্যাটটা দিয়ে খেলেছিলেন, সেটা বহুদিন নিজের কাছে রেখে দেন। আপাতত সেই ব্যাট ব্র্যাডম্যান ফাউন্ডেশনে।
আইপিএলে বোলাররা এখন গেইল-আতঙ্কে সিঁটিয়ে। ওই ইনিংসের পর বিল ব্ল্যাকের কী হয়েছিল জানা নেই। তবে ব্র্যাডম্যান শেষ জীবন পর্যন্ত দাবি করেন, “মোটেও কোনও প্ল্যানিং করে ইনিংসটা খেলিনি। দুর্ঘটনার মতো হয়ে গিয়েছিল। জানি না তিন ওভারে সেঞ্চুরি কোনও রেকর্ড কি না। তবে এটুকু বলতে পারি এই ধরনের অন্য কোনও ইনিংসের কথা আমি অন্তত আর শুনিনি।”
গেইলের সেঞ্চুরিটা দেখলে তিনি কী বলতেন কে জানে? |
|
|
|
|
|