বার্থ ডে বয় দিয়ে গেলেন একরাশ হতাশা। ‘মেন ইন পার্পল’-ও পেপসি আইপিএল-৬-এর আইসিইউ-তে। মাত্র বারো ঘন্টার মধ্যে মিশে গেল জোড়া বিষণ্ণতার স্রোত। কলকাতার আইপিএল বিলাসে এখন এমন ভাঁটার টান, যা ইডেনের গা দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গাতেও বিরল।
আগের রাতে সচিন তেন্ডুলকরের চল্লিশতম জন্মদিনের কেক কেটেও তার সেলিব্রেশনের সুযোগ জোটেনি শহরের ক্রিকেটপ্রেমীদের। চুটিয়ে নাইটদের জয় উপভোগ করার বসনাতেও ডোয়েন স্মিথ, রোহিত শর্মা, হরভজন সিংহরা ঢেলেছেন গামলা গামলা জল। জোড়া ধাক্কা একসঙ্গে সামলাতে পেরেছে ‘চিট-কাণ্ডে’ জর্জরিত এই শহর? বোধহয় না। যতই নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে সমর্থকদের হইচই নিয়ে দু’মিনিটের ইউটিউব ক্লিপ পোস্ট করে তাদের রোদ-ঝলমলে আকাশ দেখানোর চেষ্টা করুক কেকেআর, আবহাওয়া কিন্তু মোটেই তেমন রৌদ্রোজ্জ্বল নয়। বরং বেশ স্যাঁতসেঁতে। |
মহমেডান মাঠের টিকিট কাউন্টারে উধাও সেই চেনা ভিড়। টিম হোটেলের সামনে বা লবিতে অনুপস্থিত উৎসাহী তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের ঝাঁকেরও দেখা নেই। এ যেন আইপিএল চলাকালীন নয়, আইপিএলোত্তর এক দৃশ্য। অনেকটা ভাঙা হাটের মতোই। কলকাতার আইপিএল কি তা হলে শেষ? যার উত্তর দিতে পারেন গৌতম গম্ভীর ও তাঁর নাইট বাহিনীই। শুক্রবারও হারলে এর উত্তর কার্যত ‘হ্যাঁ’-ই হবে। গিলক্রিস্টদের হারাতে পারলে অবশ্য ‘ভেন্টিলেশন’ থেকে সাময়িক মুক্তি।
সন্ধ্যায় পাঁচতারা হোটেলের লবিতে আলো-আঁধারির মধ্যেও বেশ উজ্জ্বল অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। বিকেলে প্র্যাক্টিস সেরে ফিরেও যে অনেকক্ষণ নিজের ঘরে বিশ্রাম নিলেন, তা কিন্তু নয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বেরিয়ে পড়লেন বাবা-মা স্ট্যান ও জুনের সঙ্গে ডিনারে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে অটোগ্রাফ শিকারিদের আবদার মেটাতে মেটাতে তাঁদের উদ্দেশে মুখে দুষ্টু হাসি এনে বললেন, “কাল ম্যাচটা দেখতে এসো, তোমাদের টিমকে কেমন হারাব দেখো।” |
খুদেদের আফসোস, দুপুর থেকে সমানে অপেক্ষা করেও দেখা মিলল না তাদের প্রিয় ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরের। মিলবে কী করে? তিনি যে সারা দিনই হোটেলে স্বেচ্ছাবন্দি। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, সারা দিনে খেয়েছেনও খুব কম। দলের টুইটারভক্ত সদস্যরা ক’দিন হল টুইট করতেও ভুলে গিয়েছেন। নাওয়া-খাওয়া সব শিকেয় উঠেছে যেন।
দুটো ছবিকে পাশাপাশি রাখলেই বোঝা যায় মাত্র দু’দিন আগে হতাশার অন্ধকারে ডোবা ইডেনে শুক্রবার রাতে যারা মুখোমুখি হতে চলেছে, সেই কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ও কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরের ছবির ফারাকটা ঠিক কতটা স্পষ্ট। একটা দল ফুটছে, তো আর এক দল ধুঁকছে। জয়ে ফেরা, লড়াইয়ে ফেরাএই কথাগুলো এখন নাইটদের শিবিরে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনও দ্বীপের প্রাণীর ভাষার মতোই দুর্বোধ্য। অন্য দিকে পাঁচ নম্বরে থাকা দলটার কোচ ড্যারেন লেম্যানের মুখে যুদ্ধের ভাষা। সঙ্গে অবশ্য নাইটদের প্রতি সমীহও।
নাইটদের হাসপাতালে কালিস, মনোজ, লক্ষ্মীর পর রোগীর সংখ্যা একজন বাড়লেও অবাক হবেন না। বুধবার ম্যাচ হেরে মাঝরাতে হোটেলে ফেরা দলকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মাঠমুখো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কোচ ট্রেভর বেলিস। তবে যাঁর ইচ্ছা হবে, তাঁর। অর্থাৎ ‘অপশনাল’। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মনবিন্দর বিসলা এবং মহম্মদ সামিও। |
নেটে সামির এক বাউন্সার সোজা গিয়ে লাগে বিসলার বাঁ হাতের কবজির একটু ওপরে। বেশ খানিকক্ষণ বরফ-টরফ ঘষার পর হাত বেশ ফুলে উঠল। আর ব্যাট করতে না পারলেও পরে কিছুক্ষণ নকিং করলেন। হোটেলে ফিরে অবশ্য বললেন, “ব্যথা আছে। তবে মনে হয় খেলতে পারব।” রাতে শিবিরের খবরও সে রকমই। তবে সকালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কালিসের চোটে ম্যাকালামকে দলে আনার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেলেও রাতে জানা গেল, দক্ষিণ আফ্রিকান তারকার চোট অতটা গুরুতর নয়। তবে কম্বিনেশনের কথা ভেবে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে। মনোজের জায়গায় বিসলার আসার কথা। বিদেশিদের মধ্যে নারিন, মর্গ্যান নিশ্চিত। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ম্যাকালাম, সচিত্রকে নিয়ে। সচিত্র না খেললে ব্রেট লি বা রায়ান টেন দুশখাতের মধ্যে এক জন খেলতে পারেন।
কিন্তু কয়েক হাজার মাইল দুরে দক্ষিণ ভারতে বসে আছেন নাইটদের যে সম্মোহনী টনিক, সেই শাহরুখ খান প্রত্যাশা অনুযায়ী শহরে এসে পড়লে যে নাইটদের শিবিরে রোদ উঠবে না, তা কে বলতে পারে? এখন টুইট করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন এসআরকে। অভ্যাসটা বজায় থাকলে হয়তো টুইট করতেন, “আমি আসছি, নাইট বন্ধুরা। তোমরা উঠে দাঁড়াও।”
এখন বোধহয় এই টনিকই চাঙ্গা করে তুলতে পারে গম্ভীর-বাহিনীকে। |