|
|
|
|
চাপানউতোর কলেজ ও স্কুলের |
রাজনারায়ণ বসুর বাড়ি নিয়ে বিতর্ক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নব জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ, সমাজ-সংস্কারক ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মৃতি বিজড়িত একটি বাড়ি নিয়ে মেদিনীপুর কলেজ এবং কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। বাড়িটি এখন কলেজ অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাড়ির দখল ‘ফিরে পেতে’ জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের দ্বারস্থ হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আর্জি, যেন দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষও এ জেলা প্রশাসনের কাছে পাল্টা আবেদন রেখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই বাড়িটি অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে আপত্তির কী রয়েছে? অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্ত বলেন, “পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
মেদিনীপুর কলেজের একপাশে রয়েছে কলেজিয়েট স্কুল (বালক)। তারই একপাশে এই বাড়িটি। কলেজ এবং স্কুল, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে গৌরবের ইতিহাস। কলেজিয়েট স্কুলের পথ চলা শুরু ১৮৩৪ সালে। তখন নাম ছিল গভর্নমেন্ট জিলা স্কুল। আর মেদিনীপুর কলেজের জন্ম ১৮৭৩ সালে। ১৮৫১ থেকে ১৮৬৬, টানা ১৬ বছর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রাজনারায়ণ বসু। যে বাড়ি নিয়ে বিতর্ক সেখানেই থাকতেন তিনি। এই বাড়ি থেকেই বিয়ে হয়েছিল রাজনারায়ণের মেয়ে স্বর্ণলতা বসুর। |
|
কলেজিয়েট স্কুলের পাশেই সেই বাড়ি। ছবিটি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
বিয়েতে এসেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। স্বর্ণলতাদেবীরই ছেলে ঋষি অরবিন্দ ঘোষ। জেলাশাসককে দেওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের চিঠিতে স্কুলের ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, শহিদ ক্ষুদিরাম বসু, সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন।
কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ দাশ বলেন, “আমরা চাই, বাড়িটি যেন স্কুলেরই থাকে।” তাঁর দাবি, এক সময় স্কুল কর্তৃপক্ষই বাড়িটিকে কলেজ অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করার মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে এটি কলেজের সম্পত্তি নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এক সময় জেলাশাসকই কলেজ এবং স্কুলের সভাপতির পদে থাকতেন। বাড়িটি যে জমিতে, সেটিও সরকারের। তৎকালীন জেলাশাসক চেয়েছিলেন বলে রাজনারায়ণ বসু এই বাড়িতে থেকেছেন। তবে ১৯৫৭ সালের পর থেকে এই বাড়িতে কলেজের অধ্যক্ষই থাকেন। মেদিনীপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত সুধীন্দ্রনাথ বাগ বলেন, “আচমকা স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করছেন কেন বুঝতে পারছি না। আমরা তো বাড়িটির অযত্ন করিনি। বাড়ির সামনে ফলক লাগিয়েছি। বাড়িটিকে যাতে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সে জন্যও উদ্যোগী হয়েছি।” ক’দিন আগে অধ্যক্ষের আবাসনের একদিকের পাঁচিল ভেঙে কে বা কারা লোহার গেট বসিয়েছে। বিষয়টি পুলিশে লিখিত ভাবে জানান সুধীন্দ্রনাথবাবু। ঘটনার পরম্পরা দেখে তাঁর অনুমান, স্কুলেরই কয়েকজন এ কাজ করেছে। যাতে স্কুল ক্যাম্পাস থেকেই অধ্যক্ষের আবাসনে যাতায়াত করা যায়।
আগামী ৬ মে মেদিনীপুর কলেজিয়েট (বালক) স্কুলে আসার কথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ইতিমধ্যে তাঁর সচিবালয় থেকে বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতিও। তার মধ্যেই চলছে এই তরজা। কলেজ এবং কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষ, উভয়ই জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করছেন। নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সঙ্গে দেখা করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাড়িটি অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফলে, স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন। |
|
|
|
|
|