অনশনে অসুস্থ সারদার ৩ শ্রমিক, রাজ্য জুড়ে ক্ষোভ
তিন দিন ধরে রিলে অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লেন হুগলির পোলবায় সারদা গোষ্ঠীর মোটরবাইক তৈরির কারখানা তিন শ্রমিক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁদের চুঁচুড়ার ইমামবড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সারদার এজেন্ট ও আমানতকারীদের গড়া কমিটি এ দিন বহরমপুরে মিছিল-অবস্থান করেছে।
পোলবায় সারদা গোষ্ঠীর ‘গ্লোবাল অটোমোবাইলস’ কারখানায় বকেয়া বেতন এবং উৎপাদন চালুর দাবিতে আগেও রাস্তা অবরোধ করেছিলেন শ্রমিকেরা। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে আছেন ১৫০ শ্রমিক। ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের বেতন নেই। ইদানীং কারখানার কর্তারাও আসছেন না। মরিয়া হয়েই রিলে অনশন। অসুস্থ তিন শ্রমিকের মধ্যে সাইকেল রিপেয়ারিং বিভাগের অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থা গুরুতর।
২০১০-এ ‘জেনাইটিস’ ও ‘আমার পি সি’ সংস্থার মালিক, শিল্পপতি শান্তনু ঘোষের থেকে কার্যত জলের দরে কারখানাটি কেনেন সুদীপ্ত সেন। অভিযোগ, হস্তান্তরের পরে সেই ভাবে উৎপাদন চালুই হয়নি। কিন্তু দিল্লি রোডে আট একর জমিতে কারখানাটিই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর তুরুপ। শ্রমিক মাধব মাঝির অভিযোগ, “কারখানা দেখাতে প্রায়ই এসি বাসে লোক আনা হত। পরে তাঁদের থেকে নানা অছিলায় কোটি কোটি টাকা তুলত মালিকগোষ্ঠী। এই ভাবেই ৬টি ব্যাঙ্ককে ফাঁসিয়ে বিপুল ঋণ নেওয়া হয়।”
হাসপাতালে অসুস্থ অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
বারবার আবেদন সত্ত্বেও না প্রশাসন বা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তপন মজুমদার এগিয়ে না আসায় শ্রমিকেরা বিরক্ত। হুগলির জেলাশাসক মনমিত নন্দা বলেন, “১৯ এপ্রিল জেলার শ্রম অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করি। শ্রমিকেরা পিএফের টাকা কী ভাবে পাবেন, আবেদন পেলেই ব্যবস্থা করব।” কারখানার মেনলাইন অপারেটর বিভাগের কর্মী দোলন রায় বলেন, “চন্দননগর লেবার কমিশনার অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে বলা হয়, ফাইল রাইটার্সে গিয়েছে।” এখন তাঁরা চান, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও শিল্পপতিকে এনে কারখানা চালু করান।
সারদার বহরমপুরের এজেন্ট ও আমানতকারীরা সম্প্রতি ‘সারদা আমানতকারী ও এজেন্ট বাঁচাও কমিটি’ গড়েছেন। ১৩ জনকে নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি হয়েছে। এ দিন তারা বহরমপুরে মিছিল-অবস্থান করে। কমিটির এজেন্ট দীপঙ্কর দাস বলেন, “সারদার সঙ্গে অনেক নেতা-মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা দেখে কাজ করার ভরসা পেয়েছিলাম। মুর্শিদাবাদে এজেন্টের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। আমাতকারীদের চাপে ঘরে থাকতে পারছি না।” তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ার ঘোষণা করার পরে তাঁদের বাড়িতে আমানতকারীদের যাতায়াত আরও বেড়েছে। ফলে চাপও বেড়েছে।
নবদ্বীপে সারদার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অপূর্ব নাথ ও ডেভলপার মানস ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক আমানতকারী। অভিযোগ পেয়ে বালুরঘাটে সংস্থার অফিস ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। ২৯১ জন এজেন্ট এবং আমানতকারী বালুরঘাট থানায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগগুলি কলকাতায় মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।” ধুবুরিতে সারদা গোষ্ঠীর ‘ভাসাঙ্ক ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের বিস্কুট কারখানাও ‘সিল’ করা হয়েছে। এ দিন রায়গঞ্জের সার্কিট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলন করে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য বলেন, “সারদা-কাণ্ডে যদি আমাদেরও কেউ জড়িত থাকে, তাঁদের বিরুদ্ধেও রাজ্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।” শিলিগুড়ির জড়ো হন সারদার এজেন্টরা। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী যে বিচারবিভাগীয় কমিশন গড়েছেন, তার একটি অফিস শিলিগুড়িতে হোক। উত্তরবঙ্গের সবার পক্ষে কলকাতায় গিয়ে অভিযোগ জানানো সম্ভব নয়। একটি অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়াও শিলিগুড়ি শাখার অফিসের কর্মীদের ব্যবহারের জন্য দু’টি ‘স্করপিও’ গাড়ি ছিল সারদা গোষ্ঠীর নামে। ওই শাখার ম্যানেজার গৌতম চৌধুরী বলেন, “তিনটি গাড়িই অফিসের গ্যারাজে রয়েছে। পুলিশ চাইলে তা তাদের দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.