সারদা-কাণ্ডের জেরে মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির থেকে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। অব্যাহত রয়েছে ঘেরাও, বিক্ষোভ ও মামলা দায়ের করার ঘটনা। গ্রেফতার করা হয়েছে একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক-সহ মোট ৪ জনকে।
বহরমপুর শহর লাগোয়া কদবেলতলায় রয়েছে ‘ক্রিপটন গ্রুপ অব কোম্পানিজ’ নামের একটি অর্থলগ্নি সংস্থা। বছর চারেক আগে কদবেলতলায় ওই কার্যালয় খোলা হয়। মাস খানেক ধরে ওই সংস্থার দেওয়া চেক বাউন্স করছে বলে অভিযোগ। টাকা ফেরতের দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কদবলতলার অফিসের মধ্যে ‘ক্রিপটন’-এর মালিক, তাঁর স্ত্রী এবং সংস্থার দুই কর্মীকে আমানতকারী ও এজেন্টরা আটকে রাখেন। ঘন্টা দেড়েক ধরে তাঁদের আটকে রাখা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিস সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “এ দিন রাতে ‘ক্রিপটন গ্রুপ অব কোম্পানিজ’-এর মালিক প্রাণকুমার বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী শম্পা বিশ্বাস ও ওই কার্যালয়ের ম্যানেজার মৃণাল ঘোষ-সহ সংস্থার মোট ৪ জনকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটি গাড়িও আটক করা হয়েছে।”
বিক্ষোভ আমানতকারীদের।
বহরমপুর শহরের মধুপুর এলাকায় রয়েছে ‘আইকর ই সার্ভিস লিমিটেড’-এর অর্থলগ্নি সংস্থার শাখা কার্যালয়। টাকা তুলে নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে মধুপুরের ওই কার্যালয়ে হাজির হন আমানতকারী থেকে এজেন্ট পর্যন্ত অনেকেই। তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে ওই কার্যালয়ের কর্মীরা আশ্বাস দেন। সেই মতো আমানতকারী ও এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ সংগ্রহ করা হয়। ওই সংস্থার এজেন্ট ঝন্টু হালদার বলেন, “তিনটে নাগাদ টিফিন করবেন বলে কর্মীরা কার্যালয় বন্ধ করে দেন। তারপর আর খোলেনি।” মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরে এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। তবুও ‘সম্বন্ধ গ্রুপ অব কোম্পানিজ’-এর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সংস্থার ‘সর্ব ভারতীয় লিডার’ রাজেশ সিংহের বাড়ি লালগোলা থানার কালমেঘা গ্রামে। আমানতকারী সোমনাথ সরকার বলেন, “রাজেশবাবু বেশ কিছু দিন থেকে পলাতক। বুধবার রাজেশবাবুর বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।”
সংস্থার কর্তা প্রাণকুমার দাস।
সারদা-র বহরমপুরের এজেন্ট ও আমানতকারীরা অতি সম্প্রতি ‘সারদা আমানতকারী ও এজেন্ট বাঁচাও কমিটি’ নামে একটি সমিতি গড়েছেন। ১৩ জনকে নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি গড়া হয়েছে। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য আশরাফুল হক। তিনি বলেন, “টাকা ফেরত ও দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য আন্দোলন পরিচালনা করতে পরবর্তীতে অরাজনৈতিক ভাবে স্থায়ী কমিটি গড়া হবে। তার জন্য সদ্য ১৩ জনকে নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি গড়া হয়েছে।” ওই কমিটির ব্যানারে এ দিন শ’দুয়েক লোক বহরমপুর শহরে মিছিল করার পর পুরনো কালেক্টরেট মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ করেন। ওই কমিটির পক্ষে এজেন্ট দীপঙ্কর দাস বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলায় এমন এজেন্টের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। আমানতকারীদের চাপে আমরা ঘরে থাকতে পারছি না। বাইরেও থাকতে পারছি না।”
নবদ্বীপের উলবোনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি স্কুলের কর্ত্রী মিলন নাথ বলেন, “স্বামী অসুস্থ। আমার উপরেই সংসারের সব ভার। তিল তিল করে জমানো টাকা সারদার নবদ্বীপ শাখার দুই কর্তার কথা ও ব্যবহারে ভুলে প্রায় সারদায় টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছি। সারদার সেই ডেভলপার মানস ভট্টাচার্য ও নবদ্বীপের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অপূর্ব নাথেরও পাত্তা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে এ দিন ওই দু’জনের বিরুদ্ধে নবদ্বীপ থানায় এফ আই আর করি।”
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.