জলের দামে বিক্রি হয়েছে সম্পত্তি, দাবি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
আমানতকারীদের টাকা দিয়ে অ্যানেক্স কর্তা প্রসেনজিৎ মজুমদার শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের নানা এলাকায় জমির ব্যবসা, প্রমোটারিতে নেমেছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশের। সম্প্রতি ভুঁইফোঁড় বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার নিয়ে রাজ্য উত্তাল হলে রাতারাতি বেশ কিছু জমি, অ্যাপার্টমেন্ট জলের দরে পরিচিত এক ব্যবসায়ীকে তিনি বিক্রি করে দেন বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁর সংস্থার এজেন্টরা। ওই ব্যাপারে শিলিগুড়ির এক হোটেল ব্যবসায়ী, পেট্রোল পাম্প মালিকের নামও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছেছে। অ্যানেক্স-এর এজেন্ট ও আমানতকারীদের অনেকেরই দাবি, তাঁদের প্রতারণা করে যে টাকা তোলা হয়েছে তা দিয়ে কোনও সম্পদ তৈরির পরে জলের দরে বিক্রির আড়ালে ব্যবসায়িক যোগাযোগ থাকা বিচিত্র নয়। সে জন্য শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনের কাছে গিয়েও অ্যানেক্স-এর সম্পত্তি কী ভাবে, কার কাছে হাত বদল হয়েছে তা খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন এজেন্টরা। পুলিশ কমিশনার বলেছেন, “ওই সংস্থা নিয়ে যে সব অভিযোগ পেয়েছি, সবই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রসেনজিৎবাবুকে শুক্রবার ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। সারদা-র মতোই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা অ্যানেক্স-এর এই কর্তা গত ৩০ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার রাতেই শিলিগুড়ি পুলিশের একটি দল ব্যরাকপুর রওনা হয়ে যান। তাঁদের সঙ্গে ওই সংস্থার কয়েকজন এজেন্ট রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে প্রসেনজিৎ মজুমদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন শিলিগুড়ি পুলিশের অফিসাররা। পুলিশ জানায়, ধৃতের বিরুদ্ধে খড়দহ থানায় একটি মামলা রয়েছে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “ধৃতকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। অন্য থানাতেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া জমি, সম্পত্তি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে আইন মেনে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য যারা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানায়।
অ্যানেক্সের এজেন্টদের পক্ষে কৃষ্ণ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ সরকার’রা বলেন, “আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে তাতে অফিস বাড়ি, পোলট্রি ফার্ম, জমি সহ বহু কোটির সম্পত্তি রয়েছে অ্যানেক্সের নামে। নামে-বেনামে আরও সম্পত্তি রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। কোনও ভাবেই যাতে ওই সমস্ত সম্পত্তি কেউ কিনতে না পারে, তা প্রশাসনকে দেখতে হবে। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি উদ্যোগে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাব।” হলদিবাড়িতে পুলিশ অভিযোগ পেয়ে অ্যানেক্সের অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করে। পরে অফিস সিল করে দেয়। পার্থ সোনার নামে একজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করেছে।
ওই সংস্থার এজেন্ট সুমিত্রা রায় জানান, মার্চের শুরু থেকেই আমানতকারীদের পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে সমস্যা শুরু হয়। সে সময় বাজার থেকে আরও টাকা তোলার জন্য সংস্থার কর্তারা এজেন্টদের উৎসাহী করেন। তাতে সমস্যা মিটে যাবে বলে আশ্বাস দেন। সে মতো শিলিগুড়ি শাখার সাড়ে ৪ হাজার এজেন্ট প্রত্যেকেই কেউ দু’হাজার, কেউ পাঁচ হাজার, কেউ দশ হাজার টাকা করে জমা দেন। তার পরেই ২৫ মার্চ বৈঠক করে প্রসেনজিৎবাবু আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তার পরদিন থেকে আর তাঁকে শিলিগুড়িতে দেখা যায়নি। শুক্রবার দুপুরে তাঁকে যখন আদালত চত্বরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে এজেন্ট ও আমানতকারীদের থিকথিকে ভিড় ছিল। প্রসেনজিৎবাবুকে দেখতে পাওয়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যানেক্সের সদস্যেরা। |