অ্যানেক্স কর্তার ১৪ দিন পুলিশ হেফাজত
সারদা-র পর অ্যানেক্স। শুক্রবার দুপুরে যখন বিধাননগর আদালতে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে তোলা হচ্ছে তখন ব্যারাকপুর আদালতে কড়া পুলিশ পাহারায় হাজির করানো হয়েছে অ্যানেক্স কর্তা প্রসেনজিৎকে। আদালত চত্বরে এজেন্ট ও আমানতকারীদের থিকথিকে ভিড়। কেউ রাস্তার উপরেই উবু হয়ে বসে কপাল চাপড়াচ্ছেন। কেউ চেষ্টা করছেন ভিড় টপকে পুলিশের ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে যদি দেখা যায় সেই চেনা মুখটা। যিনি গত ৩০ মার্চের আগে পর্যন্ত বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়েই তাঁর সংস্থায় বিনিয়োগকারী সব ‘মেম্বার’ সুফল পাবেন। কোনও অসুবিধা হলেই পাশে থাকার আশ্বাস মিলেছে কোট-প্যান্ট, টাই পরা, চোখে দামি ফ্রেমের চশমা, বছর চল্লিশের চেনা প্রসেনজিৎকে বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে দেখে প্রথমে চিনতে পারেননি অনেকে। টি-শার্ট আর প্যান্টের আড়ালে এক গাল দাড়ি বারবার চোখ ঢাকতে চাওয়া ব্যক্তিটিই যে প্রসেনজিৎ, তা বুঝতে পারার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যানেক্সের সদস্যেরা।
এ দিন জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আদালত ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে প্রসেনজিৎকে। জগদ্দল ও খড়দহ থানা অ্যানেক্স কর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলেও বৃহস্পতিবার বিকালেই তদন্তভার দেওয়া হয় কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরকে। এ দিন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ সাংবাদিকদের জানান, অ্যানেক্স-এর আরও দুই কর্তা নির্মলকুমার ঝা ও অসীম দাসের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তিনি জানান, অ্যানেক্স-এর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ছাড়পত্র ছিল না। প্রসেনজিতের কাছ থেকে নগদ ৭২ লক্ষ টাকা ছাড়াও বেশ কিছু জমির দলিল ও চিট ফান্ডের গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। একটি ল্যাপটপও আটক করেছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, “টাকা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন ওই অ্যানেক্স কর্তা। একটু একটু করে শ্যামনগরে আত্মীয়ের বাড়িতে নগদ ৭২ লক্ষ টাকা এনে রেখেছিলেন। পালানোর ছকও কষা চলছিল। আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নজর রাখতে শুরু করেছিলাম। চিটফান্ড চালালেও ব্যবসাটির ধরন ছিল মানি সার্কুলেশন স্কিমে এজেন্ট বা আমানতকারীদের বদলে এখানে সবাই ছিলেন সদস্য।”
আদালতে ধৃত অ্যানেক্স-কর্তা প্রসেনজিৎ মজুমদার।
কমিশনার জানান, প্রসেনজিতের কাছ থেকে পাহাড়পুর ও পানপুরে বেশ কিছু জমির কাগজ পাওয়া গিয়েছে। সব থেকে বড় জমিটি ১৭৮ বিঘার। পুলিশের অনুমান সোদপুর ছাড়া ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে আর কোনও অফিস না থাকলেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নিজেদের সদস্য তৈরি করেছিল অ্যানেক্স। কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক সম্রাট তপাদার বলেন, “ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে রমিরমিয়ে চলছে কয়েক’শ চিটফান্ড পুলিশের খেলা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা ঢালছে প্রশাসনের কর্তাদের উপহার পাঠাচ্ছে সবাই নির্বিকার শুধু সাধারণ মানুষ ফাঁদে পড়ছে।”
আমানতকারীদের টাকা দিয়ে প্রসেনজিৎ শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের নানা এলাকায় জমির ব্যবসা, প্রমোটারিতে নেমেছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশের। তবে সম্প্রতি ভুঁইফোঁড় বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার নিয়ে রাজ্য উত্তাল হলে রাতারাতি বেশ কিছু জমি, অ্যাপার্টমেন্ট জলের দরে পরিচিত এক ব্যবসায়ীকে তিনি বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ তাঁর সংস্থার এজেন্টদের। ওই ব্যাপারে শিলিগুড়ির এক হোটেল ব্যবসায়ী, পেট্রোল পাম্প মালিকের নামও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছেছে।
আদালতে বিক্ষোভ আমানতকারীদের।
অ্যানেক্সের এজেন্ট ও আমানতকারীদের অনেকেরই দাবি, তাঁদের প্রতারণা করে যে টাকা তোলা হয়েছে তা দিয়ে কোনও সম্পদ তৈরির পরে জলের দরে বিক্রির আড়ালে ব্যবসায়িক যোগাযোগ থাকা বিচিত্র নয়। সে জন্য শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনের কাছে গিয়েও অ্যানেক্সের সম্পত্তি কী ভাবে, কার কাছে হাত বদল হয়েছে তা খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এজেন্টরা। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেছেন, “সংস্থার ব্যাপারে যে সব অভিযোগ পেয়েছি, সবই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিকে, হলদিবাড়িতে পুলিশ অভিযোগ পেয়ে অ্যানেক্স-এর অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করে। পরে অফিস সিল করে দেয়। পার্থ সোনার নামে একজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করেছে।
—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.