টাকা বন্ধ, নোটিস আর এক ভুঁইফোঁড়ের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
আমানতকারীদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে নোটিস ঝুলিয়ে দিল ময়নাগুড়ির বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা শিবশঙ্কর অ্যাগ্রোভেট প্রাইভেট লিমিটেড। ওই সংস্থার সঙ্গে জড়িয়েছে ময়নাগুড়ির এক ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতার নামও। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নোটিসে বলা হয়, ২ মে থেকে গচ্ছিত টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আমানতকারীদের দাবি, ‘চড়া হারে সুদ দেওয়া হবে বলে টাকা নিয়ে এখন শুধু জমা দেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার নোটিস প্রতারণার সামিল।’ ওই সংস্থার অন্যতম কর্তা অরুণাভ রায় অবশ্য বলেন, “অফিস খোলা থাকবে। কত টাকা ফেরত দেওয়া হবে সেটা অফিসে গিয়ে জানা যাবে। এখন অস্থির সময় চলছে। তাই আমাদের সংস্থা আমানতকারীরা যে টাকা জমা রেখেছেন সেটা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২ মে থেকে ওই কাজ শুরু হবে।”
আমানতকারীরা জানিয়েছেন, ওই সংস্থায় টাকা রাখলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে সুদ মিলবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এজেন্টদের তথ্য মতো প্রশাসনের অনুমান, উত্তরবঙ্গের প্রায় লাখ দু’য়েক আমানতকারী ওই সংস্থায় টাকা জমা করেন। ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, ক্রান্তি, শিলিগুড়ি, দুই দিনাজপুর, বানারহাট, জলপাইগুড়ি, হলদিবাড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই টাকা তোলা হয়। বুধবার পর্যন্ত সুদ দেওয়া হলেও দুপুরে জলপাইগুড়িতে এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করে সংস্থার কর্তারা বৃহস্পতিবার তা বন্ধ করেন। |
ওই অর্থ লগ্নিকারী সংস্থাটির সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে ময়নাগুড়ি ব্লক-২ তৃণমূল সভাপতি শশাঙ্ক বসুনিয়ার। তা নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব তদন্তেও নেমেছেন। দায়িত্বশীল পদে থেকে কেন শশাঙ্কবাবু ওই ধরনের অর্থ লগ্নি সংস্থায় যুক্ত হলেন? শশাঙ্কবাবু বলেন, “আমি ওই সংস্থার এক আমানতকারী। এজেন্টও।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে সংস্থার যোগাযোগ বিষয়টি দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখে হচ্ছে।”
২০১১-এ কুমারগ্রামে খোয়ারডাঙ্গা গ্রামে অর্থ লগ্নিকারী সংস্থাটি খোলা হয়। ২০১২-র অগস্টে ময়নাগুড়িতে অফিস খোলে সংস্থা। ১৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার কথা বলে ২০ মাসের জন্য টাকা জমা নেওয়া হয়। |
১ লক্ষ টাকা জমা রাখলে মাসে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস। (১০ হাজার টাকা সুদ এবং ৫ হাজার টাকা মূলধনের অংশ) শুধুমাত্র গত জানুয়ারি মাসে ময়নাগুড়িতে সংস্থার তরফে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে একটি বহুতল কেনা হয়েছে। সেটাই এখন সংস্থার প্রধান কার্যালয়। প্রসঙ্গত, ওই সংস্থার তরফে আইন কলেজ তৈরি, এমু পাখি পালন, ফল ফুল ও সবজি চাষ সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। সে সব কোথায় সে বিষয়ে শশাঙ্কবাবু সহ এজেন্ট-কর্মীদের কেউ কিছু বলতে পারেনি। ময়নাগুড়িতে আইন কলেজ, লাটাগুড়িতে ফিল্ম সিটি তৈরি-সহ একাধিক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেয় সংস্থাটি। তবে তার একটিও হয়নি বলে নালিশ এজেন্ট-আমানতকারীর। সংস্থার অন্যতম কর্তা অরুণাভ রায়ের দাবি, প্রস্তাবিত সমস্ত প্রকল্পের কাজ হবে। |