বিক্রি কম তাঁতের শাড়ির, চিন্তায় শিল্পীরা
তুলনায় কম দামের সুতি, সিন্থেটিক-সহ নানা ধরনের শাড়ির বাজার দখল, অন্য দিকে গত বছর ফসল ভাল না হওয়া। মূলত এই দুয়ের ফাঁদেই গত আর্থিক বর্ষে ভাল গেল না তাঁতের শাড়ির বাজার, এমনটাই দাবি করেছেন কালনা মহকুমার তাঁত ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁতের শাড়ি বিক্রি না হওয়ার পিছনে আরও নানা কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
কালনার একটি বড় অংশের মানুষের সংসার চলে তাঁত বুনে। বেশির ভাগ জায়গাতেই হস্তচালিত যন্ত্রে শাড়ি বোনা হয়। শাড়ি ছাড়াও তৈরি হয় ধুতি, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি। মহকুমার সমুদ্রগড় ও ধাত্রীগ্রাম এলাকায় রয়েছে তাঁতের বড় বাজার। এই দুই জায়গায় তাঁতের কাপড়ের ব্যবসা করেন প্রায় দু’শো মানুষ। তাঁরা তাঁতিদের থেকে কাপড় কিনে কলকাতা, হাওড়া-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে পাঠান। ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, এলাকায় এবং অন্যত্র, সব জায়গাতেই গত আর্থিক বর্ষে ট্র্যাডিশানাল তাঁতের বাজার খারাপ গিয়েছে। ক্রেতারা ছাপা শাড়ি, সিন্থেটিক এবং হ্যান্ডলুমের শাড়ি বেশি কিনেছেন। দুর্গাপুজো, পয়লা বৈশাখ, জামাইষষ্ঠী, ঈদ ইত্যাদি উৎসবেও তাঁতের শাড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁতশিল্পীদের।
হঠাৎ তাঁতের শাড়ির প্রতি ক্রেতারা উদাসীন হয়ে পড়লেন কেন? ব্যবসায়ীদের দাবি, আগের থেকে তাঁতের শাড়ির দাম বেড়েছে বহু গুণ। সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামের এখন শাড়ির ন্যূনতম দাম সাতশো টাকার আশপাশে। কিন্তু ছাপা শাড়ি, সিন্থেটিক, লুমে তৈরি শাড়ির দাম তার তুলনায় বেশ কম। তিনশো থেকে পাঁচশো টাকার মধ্যেই সেই সব শাড়ি পাওয়া যায়। সে কারণে ক্রেতারা সে দিকে ঝুঁকেছেন বলেই ব্যবসায়ীদের ধারণা।
ফল নেই দিনভর পরিশ্রমেও। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, পেঁয়াজ ছাড়া গত বছরে অন্য কোনও ফসলেরই ফলন ভাল হয়নি। তাই রোজগারও কম হয়েছে। অল্প বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটা সারতে হয়েছে সবাইকে। ব্যবসায়ীদের এই দাবির যে সত্যতা রয়েছে, তা বোঝা যায় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেও। সমুদ্রগড়ের বাসিন্দা অঞ্জন বসাক, কালনার রাহাতপুরের হানিফ শেখরা বলেন, “এ বছর ফসলের ভাল দাম পাইনি। একেই নিত্যদিনের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তাই সারা বছরের কেনাকাটার বাজেট কম করতে হয়েছে।”
তাঁতের শাড়ি কম বিক্রির পিছনে রয়েছে আরও নানা কারণ। ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন ক্রেতারা শাড়িতে বিভিন্ন নকশা চাইছেন। কিন্তু সনাতনি তাঁতের শাড়িতে তা পাচ্ছেন না তাঁরা। কিন্তু রঙে, নকশায় এই তাঁতের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বাংলাদেশের তাঁতের শাড়ি। সমুদ্রগড়ে বাংলাদেশি তাঁতের শাড়ির আট জন এজেন্ট রয়েছেন। সম্প্রতি সেলের সময়ে কালনা পুরনো বাসস্ট্যান্ড, ধাত্রীগ্রাম-সহ নানা জায়গার ব্যবসায়ীদেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁরা জানান, তাঁত ছেড়ে বেশির ভাগ ক্রেতাই এ বার তুলনামূলক কম দামের ছাপা ও সিন্থেটিক শাড়ি কিনেছেন।
তাঁতের শাড়ির দামই বা বাড়ছে কেন? ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁতশিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব শাড়ির দাম অনেকটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বছর পাঁচেক আগেও উত্তরবঙ্গের প্রচুর তাঁতশ্রমিক সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামে এসে শাড়ি তৈরি করতেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় তাঁতশিল্পের প্রসার হওয়ায় সমুদ্রগড়ে কাজ করতে আসা শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। শ্রমিকের জোগান কমায় মজুরি বেড়েছে বহু গুণ। ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, কেন্দ্র ভর্তুকিতে যে সুতো দিচ্ছে, তার গুণগত মান ভাল নয়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা কাজে আসে না। খোলা বাজার থেকে চড়া দামে সুতো কিনতে হয়। বছর কয়েক ধরে খোলা বাজারে সুতোর দামও বাড়ছে। তাঁতিদের মধ্যেও এই শিল্পের প্রতি অনীহা বাড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পরেও উপযুক্ত মূল্য না পাওয়াতেই অনেক পরিবার তাঁত বোনা থেকে সরে যাচ্ছে বলে তাঁদের মত। কালনা শহর ও আশপাশের এলাকার বেশ কিছু তাঁতিদের নিয়ে তৈরি হয়েছে অম্বিকা কালনা তাঁত হস্তশিল্প স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ফেডারেশন। সেটির সম্পাদক দুলাল ধরের কথায়, “এ বছরটা খুব ভাল গেল না। এখনও বহু শাড়ি আমরা বিক্রি করতে পারিনি।” সমুদ্রগড়ের টাঙ্গাইল তাঁত বস্ত্র সমিতির সদস্য কার্তিক ঘোষ বলেন, “পুজোর মরসুমে তাঁতের শাড়ির চাহিদা একটু বেশি ছিল। কিন্তু একটা মরসুম তো আর গোটা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে তাঁতের সঙ্গে অন্য শাড়িও রাখতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তাই তাঁতের শাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.