সারদা কী ভাবে বাজার থেকে টাকা তুলত, সে ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য বর্ধমান থানার হিরাগাছি গ্রাম ধৃত দুই এজেন্টকে নিজেদের হেফাজতে নিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সিজেএম আদালতে তোলা হলে মাধব দাস ও জয়ন্ত চৌধুরী নামে ওই দু’জনকে চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সারদা-কাণ্ডের ধাক্কা লেগেছে জেরে অন্য সব ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার ব্যবসাতেও। বাজার থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়েছে। অফিসে-অফিসে ভিড় করছেন আমানতকারীরা। বাধ্য হয়ে স্থানীয় কর্মচারী ও এজেন্টরা নানা গালগল্প ফাঁদছেন। অনেক অফিস আবার নামেই খোলা। কর্মীদের দেখা নেই। এজেন্টরাও গরহাজির।
বর্ধমান শহরের পারবীরহাটায় একটি বহুতলে রয়েছে এমনই একটি সংস্থার অফিস। কর্মীদের ভাষায়, ‘মানি মার্কেটিং’ সংস্থা। সেই সংস্থার এক শাখা ম্যানেজারকে কয়েক দিন আগে গ্রেফতার করেছে মেমারি থানার পুলিশ। তাদের ট্রেড লাইসেন্স ছিল চা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা। তা সত্ত্বেও তারা বাজার থেকে টাকা তুলছে কী করে, শাখা ম্যানেজার প্রদীপ মুখোপাধ্যায় সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, তাঁদের সব কিছুই ঠিক রয়েছে। আমানতকারীরা শুধু-শুধু ‘অধৈর্য’ হচ্ছেন। আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে টাকা তুলতে যাওয়া নিয়েই গোলমাল দেখা দিয়েছে। তবে সারদা কাণ্ডের পরে যে আমানতকারীর সংখ্যা কমছে, তা তিনি স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বীরহাটায় একটি ‘মানি মার্কেটিং’ সংস্থার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেটি প্রায় ফাঁকা। কাগজে-কলমে ২৭ জন কর্মীর অফিসে থাকার কথা। রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। সংস্থার অপারেশন ম্যানেজার সন্দীপ দাস বললেন, “সারদা কাণ্ডের পরে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি। বর্ধমান ও হুগলিতে প্রায় ১০০ এজেন্ট এই সংস্থার হয়ে কাজ করে। অনেকে বসে গিয়েছেন। আমাদেরও কাজ থাকবে কি না, কে জানে!”
শাঁখারিপুকুর রোডে একটি বেসরকারি সঞ্চয় সংস্থার অফিসে আবার কোনও অফিসারেরই দেখা মেলেনি। অফিস খুলে বসে ছিলেন এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এই সংস্থা ঠিক কী কাজ করে, তা তিনি বলতে পারেননি। পরে টেলিফোনে সংস্থার বর্ধমান শাখার ম্যানেজার তরুণ পাল বলেন, “বাজারে ডামাডোল চলছে। তাই অফিসে লোক নেই। তবে য চাইছে, তাকেই আমরা আমানতের টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।” পাশের একটি আর্থিক সংস্থায় কিন্তু আমানতকারীদের ভিড় চোখে পড়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের আমানত তুলে নিতে চাইছেন।
বর্ধমানের টক অফ দ্য টাউনে রয়েছে জেলার অন্যতম বড় একটি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস। সেখানে ঢোকার চেষ্টা করতেই কয়েক জন এসে পথ আটকে দাঁড়ান। তাঁদের ফতোয়া, “সাংবাদিকদের এখানে ঢোকার অধিকার নেই।” ২০১১ সালেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি না নিয়ে ‘হসপিটাল বন্ড’ নামে একটি বন্ড বাজারে ছাড়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই সংস্থার বিরুদ্ধে। সেই বন্ড বিক্রির আগাম অনুমতি যে নেওয়া হয়নি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নন-ব্যাঙ্কিং সুপারভিশন দফতর তা জানিয়েও দেয়। কিন্তু আমানতকারীরা কেউ থানায় অভিযোগ না করায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “জেলার গ্রামীণ এলাকায় কত এ রকম সংস্থা রয়েছে, সেগুলি কত টাকা বাজার থেকে তুলেছে, কার বিরুদ্ধে কবে কী কী অভিযোগ হয়েছিল, আমরা তার রিপোর্ট তৈরি করছি। আমানতকারীরা অভিযোগ দায়ের করলেই সেগুলির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।” |