এখন দেখা মেলে না বোঝাই করা কলসি হাড়ি। কংক্রিটের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী দখল করছে গোটা চত্বর। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে পালপাড়াকে দেখে কে বলবে এখানে এক সময় শুধুই মাটির সামগ্রী তৈরি হত। যে মানুষেরা মাটির কাজ করতেন তাঁরা অন্য পেশায় গিয়েছেন। রুজির টানে ওই পরিবর্তনের ফলে পাল্টে গিয়েছে পালপাড়া সামগ্রিক ছবিটাও।
পালপাড়ার অন্তত ৪০টি পরিবার মাটির সামগ্রী তৈরির কাজ করতেন। এখন হাতে গুনে দশটি পরিবারকে ওই কাজে পাওয়া যায়। কেউ পুরনো পেশা ছেড়ে সিমেন্টের রিং গড়ছেন। কে অন্য ব্যবসা খুলে বসেছেন। পালপাড়ার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য শেষ লড়াই লড়ছেন কিছু প্রবীণ শিল্পী। কেন ওই পরিবর্তন? শিল্পীরা জানান, মাটি থেকে রং প্রতিটি সামগ্রীর দাম বেড়েছে। সামগ্রী তৈরির পরে বিক্রি করতে গেলে সেই দাম মিলছে না। ওই পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব রক্ষায় তাঁরা সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন। পুর চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, “মৃৎশিল্পীদের অনেকে এখন সিমেন্টের রিং তৈরির কাজ করছেন। কিন্তু ওঁরা কখনও সমস্যার কথা জানায়নি। ওঁরা আবেদন জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিল্পীরা জানান, বাজার দেখে এ প্রজন্মের কেউ বংশপরম্পরায়ের কাজে যেতে চায় না। দশটি পরিবার মাটির কাজে টিকে। বেশিরভাগ পরিবার অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। প্লাস্টিকের দাপটে বন্ধ মাটির ভাড়ের ব্যবহারও। মাটির প্রদীপের চাহিদা কমেছে। এখন এক গাড়ি মাটির দাম হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। জ্বালানির দাম প্রায় ৬০০ টাকা কুইন্টাল। ফলে মাটির তৈরির সামগ্রী প্লাস্টিকের সামগ্রীর সঙ্গে দামে পাল্লা দিতে পারছে না। শিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, “চড়া দামে মাটি কিনে কিছু বানিয়ে বিক্রি করে খরচ উঠছে না। ফলে সেই কাজ চালানো সম্ভব হয় না। সেই জন্যই নতুন প্রজন্ম বাধ্য হয়ে বংশপরম্পরায়ের মাটির কাজ ছেড়ে অন্য পেশাতে চলে যাচ্ছে।” কিন্তু এ ভাবে পেশা পরিবর্তন করায় পাড়া যে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে সেটাও জানেন শিল্পীরা। তবু তাঁরা নিরুপায়। মৃৎশিল্পী নয়নতারা পাল ও দুলাল পাল বলেন, “আর্থিক কারণে পুরনো পেশাকে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার এগিয়ে না এলে পালপাড়া হারিয়ে যাবে।” |