সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে উত্তরবঙ্গে বিক্ষোভ-মিছিল, অবরোধ চলছেই। বুধবার দুপুরে মালদহে সংস্থার প্রস্তাবিত প্রকল্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এজেন্ট ও আমানতকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে বিক্ষোভরতরা মন্ত্রী গৌতম দেবের গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টাও করে বলে অভিযোগ। পুলিশের হস্তক্ষেপে মন্ত্রী বার হন।
মালদহে সারদা গোষ্ঠীর স্কুলে আগুন লাগানোর সময়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ এজেন্ট ও স্থানীয় বাসিন্দারা লক্ষ্মীপুরে নির্মীয়মাণ সারদা ওয়ার্ল্ড স্কুল অ্যান্ড অ্যাকাডেমি’র দুইটি ঘর ভাঙচুর করে চেয়ার, টেবিল-সহ সমস্ত আসবাবপত্র লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। বাকি আসবাবপত্র অফিসের বাইরে ফেলে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগুন ধরিয়ে লুঠপাট করার ব্যাপারে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।” |
বিক্ষোভকারী সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টদের দাবি, মালদহে আমানতকারীদের টাকায় সারদা গোষ্ঠীর তিনটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেগুলি আইনমাফিক বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর ১২টা নাগাদ শতাধিক এজেন্ট পলিটেকনিক কলেজের পাশে সারদা হাউজিং কমপ্লেক্সে হামলা চালান। যেখানে সারদা গোষ্ঠী ১২ তলা হাউজিং গড়ে ১০২টি ফ্ল্যাট তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল। বিক্ষোভকারী এজেন্ট ছোটন মণ্ডলের অভিযোগ, “আমার নিজের দশ লক্ষ টাকা সারদায় আটকে রয়েছে। মালদহ থেকে ৩০ কোটি টাকা সারদা তুলে নিয়ে গিয়েছে। টাকা না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ থাকবে না।” লক্ষ্মীপুরে সাড়ে দশ বিঘা জমির উপর সারদা যে স্কুল তৈরি করছিল, সেই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, টাকা না পেলে স্কুলের জমি দখল করা হবে।
শিলিগুড়িতে সারদা গোষ্ঠীর অন্য অভিযুক্ত ও আরও কিছু ভুঁইফোঁড় বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তাদের গ্রেফতারের দাবিতে হিলকার্ট রোড অবরোধ করেন এজেন্ট ও আমানতকারীদের একাংশ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে হিলকার্ট রোড বেলা আড়াইটা থেকে অন্তত ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। সন্ধা পর্যন্ত তা চলায় দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হয় স্কুল-কলেজ, অফিস ফেরত পড়ুয়া ও অন্য বাসিন্দাদের। পরে লাগোয়া গলি দিয়ে গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
বেলা আড়াইটে থেকে অ্যানেক্স নামে একটি সংস্থার এজেন্ট, আমানতকারীরা পথ অবরোধ শুরু করেন। পৌনে চারটে নাগাদ তাঁরা অবরোধ তুলেও একই জায়গায় অবরোধ শুরু করেন অন্য একটি সংস্থার এজেন্ট, আমানতকারীরা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাতে চান তারা। মন্ত্রী অবশ্য তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। তিনি চারটে নাগাদ বার হলে তাঁর গাড়ি আটকাতে চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এর পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত তাঁরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে হিলকার্ট রোড অবরোধ করে রাখেন। পরে অবরোধ তুলে পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দিতে যান তারাও। |
এ দিন সারদা গোষ্ঠীর কয়েকজন এজেন্ট এবং শিলিগুড়ি শাখার ম্যানেজার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর কাছে সমস্যা সমাধানের দাবিতে স্মারকলিপি দেন। গৌতমবাবু বলেন, “যাঁরা সিনিয়র এজেন্ট, যাঁদের মাধ্যমে বিপুল টাকার আমানত হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের কোনও সহানুভূতি নেই। ছোট আমানতকারীদের সমস্যা নিয়ে সরকার ভাবছে। এর বাইরে কিছু বলতে চাই না। সরকার তদন্ত কমিশন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন।”
উত্তরবঙ্গের অন্য প্রান্তে জলপাইগুড়ির আলিপুরদুয়ারে সারদা কাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলিপুরদুয়ারের ব্যস্ততম চৌপথী অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান যুব কংগ্রেস ও কংগ্রেস সমর্থকরা। ডুয়ার্সের চা বলয়ের শ্রমিকদের টাকা উদ্ধার করার দাবিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারা। বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা জন বার্লা বলেন, “সারদা কাণ্ডের পরে অনেক চা শ্রমিক যখন বিভিন্ন সংস্থায় টাকা তুলতে যাচ্ছে, তখন তাদের জানানো হচ্ছে টাকা ফেরত দিতে ২-৩ মাস সময় লাগবে। এগুলি সবই টাকা আত্মসাতের চক্রান্ত। গরিব চা শ্রমিকদের আমানত রক্ষা করার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেব।” অন্য দিকে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের তরাই-ডুয়ার্স আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক রাজেশ লাকড়া বলেন, বহু চা শ্রমিকের সঞ্চয়ের টাকা রয়েছে এই সংস্থাগুলিতে। প্রশাসন আগে থেকে তৎপর হলে এই পরিস্থিতি হত না. চা শ্রমিকদের টাকা ফেতর দিতে রাজ্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
এ দিন, সারদা কাণ্ড ঘিরে কোচবিহার জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখান সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীরা। বুধবার দুপুরে শতাধিক এজেন্ট ও আমানতকারী ওই বিক্ষোভে সামিল হন। বিক্ষোভে সামিল মহিলা এজেন্ট ও আমানতকারীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেখলিগঞ্জেও একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তার বাড়িতে ভিড় করেন এজেন্ট ও আমানতকারীরা। উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ সেখানে গিয়ে এক কর্তাকে উদ্ধার করে মেখলিগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়।
|