কাগজকলমে চিকিৎসক আছেন আট জন। বাস্তবে দেখা যায় পাঁচজনকে। বাকি তিন জন চিকিৎসক ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে বেতন নিলেও কাজ করছেন অন্য ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ওই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ হাসপাতালের পরিষেবা ঠিক রাখতে গিয়ে বিপাকে চিকিৎসকরা। বন্ধ উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে দেখার কাজ। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বহির্বিভাগ সামাল দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
ময়নাগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ বলেন, “রোগীর চাপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সেই তুলনায় চিকিৎসক নেই। ফলে পরিষেবা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের রাতে কাজ করে ফের সকালে বহির্বিভাগ সামাল দিতে হচ্ছে। কতদিন চলবে বুঝতে পারছি না।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার ব্লক স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী এবং ভারপ্রাপ্ত বিডিও সমরেশ রায়। বিধায়ক বলেন, “খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। দ্রুত চিকিৎসক পাঠানোর জন্য জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের চিঠি পাঠানো হবে। ওই চিঠিতে বলা হবে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যে কোনও সময় হাসপাতালের চিকিৎসকদের রোষের মুখে পড়তে হবে।”
সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার। তিনি বলেন, “ওই সমস্যা শুধু ময়নাগুড়ির নয়। সবখানে রয়েছে। চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসক ময়নাগুড়ি থেকে বেতন নিয়ে অন্য হাসপাতালে কাজ করে থাকলে খোঁজ নিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।”
|
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬০ শয্যার ওই হাসপাতালে ৮০ জন থেকে ৯০ জন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যায়। এই সময় বহির্বিভাগে গড়ে আটশো রোগী ভিড় করেন। ময়নাগুড়ি ব্লক ছাড়াও ওই গ্রামীণ হাসপাতালের উপরে নির্ভর করে থাকে কোচবিহারের মোখলিগঞ্জ মহকুমা ও মালবাজার মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “রাজ্যে কোনও গ্রামীণ হাসপাতালকে এতটা চাপ সামলাতে হয় বলে জানা নেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় বহু কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।”
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে নিয়ে চিকিৎসক থাকার কথা ৭ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে বেতন দেওয়া হলেও কাজ করেন মালবাজারে। দু’বছর থেকে এ ভাবে চলছে। অনেক চেষ্টার পরে দু’মাস আগে একজন চিকিৎসক পাঠানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাঁকেও একইভাবে জলপাইগুড়িতে তুলে নেওয়ায় সেই পাঁচজন চিকিৎসককে হাসপাতালের পরিষেবা ঠিক রাখার কাজ করতে হচ্ছে। ওই চিকিৎসকদের কোনও একজন অসুস্থ হলে অথবা ছুটিতে গেলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বহির্বিভাগের পরিষেবা। বাড়তি চাপ সামাল দিতে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককের দফতরের কাজও লাটে ওঠার মুখে। ব্লকে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ৪০টি। গত আট মাস হল ব্লক স্বাস্থ্য কর্তাদের কেউ ওই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি পরিদর্শণের সময় করে উঠতে পারেননি। বিএমওএইচ বলেন, “কেমন করে যাব! অফিস ছেড়ে হাসপাতালে রোগী দেখতে হচ্ছে। বাইরে গেলে চারজন চিকিৎসক থাকেন। কখন কী হয় ঠিক নেই।” |