ভুঁইফোঁড়দের জালে বন্দি চা শ্রমিকেরাও
টাকা জমা রাখলে প্রতি মাসে মিলবে ২০ শতাংশ হারে সুদ। এ ছাড়াও পাঁচ বছর পরে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ফেরত দেওয়া হবে। ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার স্থানীয় এজেন্টের কথায় ভরসা রেখেছিলেন তুরতুরি চা বাগানের শ্রমিক বিনয় ওরাঁও। অবসর গ্রহণের পরে তিনি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হাতে পেয়ে সেখানে জমা করেন। জয়ন্তী বাগানের শ্রমিক এতোয়া লোহার গত বছর পুজোয় পাওয়া বোনাসের টাকা তুলে সেখানে জমা করেন। সংস্থার আশ্বাস মতো সাত আট মাস টাকা মিলেছে। কিন্তু এর পরে হঠাৎ টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে ওই অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার আলিপুরদুয়ার ও শামুকতলার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে এজেন্টদের পিছনে ঘুরে একটি পয়সাও মেলেনি।
শুধু এতোয়া, বিনয় নয়। শামুকতলা ও কুমারগ্রাম এলাকার চা বাগানগুলিতে এমন বহু শ্রমিক দ্বিগুণ টাকা ফেরতের আশায় অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে বিপাকে। জানা গিয়েছে, ডুয়ার্সের ওই চা বাগানগুলিতে পনেরোটি ভুঁইফোঁড় সংস্থা জাল বিছিয়েছে। এ জন্য অভিনব কৌশলও নেওয়া হচ্ছে। বাইরের ‘টিম লিডাররা’ স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগ করে শ্রমিকদের প্রলোভন দিয়ে থেকে টাকা তুলছেন। বাগানের অফিসের কর্মীরাও এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন। ওই ‘অফিসবাবু’দের কথা বিশ্বাস করে ৫ বছরে টাকা দ্বিগুণের পাশাপাশি প্রতি মাসে জমা টাকা থেকে ২০ শতাংশ সুদ পাওয়ার আশায় সঞ্চিত টাকা জমা করে অনেকের মাথায় হাত।
তথ্য অনুযায়ী দু’বছরে শামুকতলা ও কুমারগ্রমের ১৪টি চা বাগান থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়েছে সংস্থাগুলি। ওই টাকা আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ধওলাঝোরা বাগানের নিলম, ফুলিয়া, চম্পা, শেফালিরা। এক এজেন্টের কথায় তাঁরা টাকা জমা করেন। ২০ শতাংশ হারে মাসে সুদ দেওয়ার কথা। টাকা জমা দেওয়ার পরে এজেন্টের দেখা মেলেনি। সংস্থার আলিপুরদুয়ার শহরে যে অফিস ছিল সেটাও বন্ধ। ওই শ্রমিকরা বুঝতে পারছেন না টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য কোথায় যাবেন। একই ছবি ফাঁসখোয়া, চুনিয়া, কুমারগ্রাম, সংকোশ, নিউল্যান্ড চা বাগানে। কেন ওই সমস্ত সংস্থায় টাকা রাখলেন? এতোয়া বললেন, “বাগানের এক এজেন্ট বললেন ভাল কোম্পানি। ওখানে টাকা রাখলে টাকা মার যাবে না। অনেক বেশি সুদ মিলবে। ওই লোভে টাকা রেখেছিলাম। এমন যে হবে তা কে আর জানত!”
সারদা কাণ্ডের পরে এ ছবি সামনে উঠে আসতে উদ্বিগ্ন প্রশাসনের কর্তারা। আলিপুরদুয়ার-২ বিডিও সজল তামাং বলেন, “অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও চা বাগানের শ্রমিকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।” সিটুর জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিদ্যুৎ গুণ বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ভুঁইফোঁড় সংস্থার এজেন্টরা শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা তুলছে।” জয়ন্তী চা বাগানের প্রধান করণিক জীবন ঘোষ জানান, বাগানে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি জাঁকিয়ে বসায় বাগান কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। বাগানের অন্তত ৪০ জন শ্রমিক ওই সমস্ত সংস্থায় টাকা জমা করে প্রতারিত হয়েছেন। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ফাঁসখোয়া চা বাগান এলাকার নেত্রী অঞ্জু ঘোষ বলেন, “বাগান শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এজেন্টরা টাকা তুলছে। দ্রুত এটা বন্ধ করা জরুরি। সংগঠনের তরফে শ্রমিকদের সচেতন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.