সারদা গোষ্ঠীর দানের অ্যাম্বুল্যান্স জঙ্গলমহলে পাঠিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইতিমধ্যেই যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। এ বার ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থার গেরোয় আটকে যাচ্ছে কর্পোরেট বাসও।
মহাকরণের খবর, কলকাতা ও লাগোয়া জেলা শহরে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে বাস চালানোর পরিকল্পনা করেছিল মমতার সরকার। সেই অনুযায়ী দু’দফায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তার উত্তরে যে-ছ’টি সংস্থার কাছ থেকে আগ্রহপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাদের অর্ধেকই ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থা। এবং তাদের মধ্যে রয়েছে সারদা গোষ্ঠীও! পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “সারদা গোষ্ঠীতে আমানতকারীদের কোটি কোটি টাকা লোপাটের পরে কর্পোরেট বাসের প্রকল্পটি নতুন ভাবে শুরু করতে হবে। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থাকে দিয়ে বাস চালালে প্রশ্ন উঠবে।”
রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলির ভর্তুকি-নির্ভরতা কাটাতে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে বাস চালানোর পরিকল্পনা বাম আমলের। ওই সব বাসের পোশাকি নাম ছিল কর্পোরেট বাস। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন সরকার আসার পরে নিগমগুলিকে নিজেদের পায়ে দাঁড় করাতে বেশি করে কর্পোরেট বাস চালানোর উপরে জোর দেওয়া হয়। সেই কারণে ২০১২ সালের গোড়ায় এবং ওই বছরেরই অগস্টে কর্পোরেট বাস চালাতে আগ্রহী সংস্থার নাম চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় সরকার। দু’দফায় সাড়া দেয় ছ’টি সংস্থা। তাদের মধ্যে ছিল সারদা গোষ্ঠী। অভিযুক্ত অন্য দুই ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থার নাম রোজভ্যালী ও ওয়ারিশ।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওই সংস্থাগুলিকে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের দাবি, “ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলিকে দিয়ে বাস চালানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তা ছাড়া সরকার তখন ওই সংস্থাগুলির স্বরূপ জানতও না। কর্পোরেট বাস চালানোর জন্য এখন আমরা সম্পূর্ণ নতুন করে তালিকা তৈরি করছি।”
এক পরিবহণ-কর্তা জানান, কর্পোরেট বাস চালানোর ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানোর ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি এবং কর্পোরেট বাসের উন্নত মানের পরিষেবার কথা বিবেচনা করেও ভাড়া বাড়াতে রাজি ছিল না সরকার। সেই কারণেই বিজ্ঞাপনে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরিবহণ দফতর সূত্রের দাবি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাতানুকূল বাসের ভাড়া বাড়িয়ে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। ওই কর্তার দাবি, এর আগে বিজ্ঞাপনের জবাবে যাঁরা বাস চালাতে রাজি বলে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাঁরা সরকারের শীর্ষমহলের কর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তার ভিত্তিতেই রাজি হন। কিন্তু এখন, সারদা কাণ্ডের পরে আর ওই তিন ভুঁইফোঁড় সংস্থাকে বাস চালানোর দায়িত্ব দিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চাইছে না সরকার। সেই কারণেই প্রস্তাবিত নতুন তালিকায় যে কোনও ভুঁইফোঁড় সংস্থার ঠাঁই হবে না, তা এক রকম নিশ্চিত। |