সারদা গোষ্ঠীতে টাকা রেখে যাঁরা হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ত্রাণ তহবিল’ ঘোষণাকে কী চোখে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা? এটা কি রাজ্যবাসীর প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা? নাকি অবিবেচক লগ্নিকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে জনপ্রিয়তা কেনার চেষ্টা?
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ন্যূনতম কর্তব্যই করেছেন। “এই অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে সরকার লজ্জাজনক ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই লগ্নিকারী গরিব মানুষদের জন্য একটা তহবিল গঠন করা সরকারেরই দায়িত্ব।” তাঁর যুক্তি, গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক নানা অনিয়ম করার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া যদি তার গ্রাহকদের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষদেরও সরকারি সহায়তা দাবি করতে পারে। কিন্তু ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থাগুলি যে ব্যাঙ্ক নয়, তা কি মানুষ জানেন না? অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, “আমার আশঙ্কা, সকলে নিয়ন্ত্রণের বিধিনিয়মে তফাত বোঝেন না।”
সরকারের দায়বদ্ধতার উপর জোর দিচ্ছেন আইআইএম কলকাতার অধ্যাপক অনুপ সিংহও। তাঁর বক্তব্য, গত কয়েক দিনের চাপান-উতোর থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণের দায় কেন্দ্রের না রাজ্যের তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। আর নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতাতেই এই দশা। “বাস্তবিক দরিদ্রদের চিহ্নিত করে এককালীন কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে অবস্থা সামাল দেওয়ার একটা চেষ্টা বলে ধরা যেতে পারে। এটা সরকারের ন্যূনতম কাজ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে সঙ্কট হলেই ক্ষতিপূরণ দেব, এটা নীতিগত ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
অচিন চক্রবর্তী অবশ্য মনে করেন, নীতির প্রশ্নেই সরকারের এ ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ঠিক নয়। ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের এই অধ্যাপকের বক্তব্য, “জেনেশুনেই লোকে ঝুঁকি নিয়েছে। ব্যাঙ্কে যেখানে আট শতাংশের বেশি সুদ দেয় না, সেখানে সারদার মতো গোষ্ঠীরা কী করে ৩৫ শতাংশ দিচ্ছে সে ধারণা কারও নেই, এটা দাবি করা ভুল। এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা মানুষের থাকে।
সরকার কেন সেই প্রবণতাকে সমর্থন করবে?” তাঁর বক্তব্য, একেবারে না-খেয়ে কারওকে মরতে না হয়, সেই সম্ভাবনা এড়াতে যেটুকু করার, এ ক্ষেত্রে রাজ্যের কর্তব্য সেইটুকুই। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার চেষ্টা ভুল হবে।
লগ্নির বাজারের সঙ্গে পরিচিত অনেকেই অবশ্য বলছেন, আপৎকালীন ত্রাণের মতো করে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বললেও, কার্যক্ষেত্রে তা করা প্রায় অসম্ভব। কে কত টাকা দিয়েছেন, টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে কারা অগ্রাধিকার পাবেন, কাকে কত টাকা দেওয়া হবে, এগুলি স্থির করতে কমিটির অনেকটা সময় লাগবে। তড়িঘড়ি তহবিল ঘোষণা করলেও, সর্বস্বান্ত মানুষদের হাতে তাড়াতাড়ি টাকা পৌঁছনো যাবে না। |