টাকা সুরক্ষিত, দাবি রোজ ভ্যালীর
সারদার স্কুলে ভাঙচুর, অবরোধ
সুদীপ্ত সেন ও তাঁর দুই সহযোগী ধরা পড়লেও সারদা-কাণ্ডের জেরে বিক্ষোভ-অবরোধ-ভাঙচুর চলল বুধবারও। কোথাও তাতে সামিল সংস্থার এজেন্ট, কোথাও আমানতকারীরা। শুধু সারদা নয়, অন্যান্য ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও আমানতকারীদের ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। খোঁজ মিলছে এমন আরও অনেক সংস্থার, যারা সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। গায়েব হয়ে গিয়েছেন সংস্থার শীর্ষ কর্তারা।
এই ধরনের সংস্থা নিয়ে আম জনতার হাজারো প্রশ্ন ও সংশয়ের মধ্যেই রোজভ্যালী সংস্থা এ দিন রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের ব্যবসার মধ্যে কোথাও কোনও অস্বচ্ছতা নেই। আমানতকারীদের টাকা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে। টাকা মার যাওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবু আমানতকারীদের কেউ চাইলে চেকে টাকা ফেরত নিতে পারেন। রোজভ্যালী এই চিঠি দিলেও তাদের দাবি কতটা ঠিক, সরকার তা খতিয়ে দেখছে।
রোজভ্যালীর রানিগঞ্জ অফিস থেকে চেক দেওয়া চলছে সোমবার রাত থেকেই। কিন্তু দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে তাদের কার্যালয়ে তা শুরু হয়নি। বুধবার সেখানে টাকা ফেরতের দাবিতে কয়েকশো আমানতকারী বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও দিনভর ভিড় ছিল গ্রাহকদের। কর্মীদের সঙ্গে কয়েক দফা বাদানুবাদও হয় আমানতকারীদের।
মালদহের লক্ষ্মীপুরে সারদার আবাসন প্রকল্পে বিক্ষোভ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনও ক্রমেই ছড়াচ্ছে। মালদহের লক্ষ্মীপুরে এই গোষ্ঠীর নির্মীয়মাণ স্কুলে ভাঙচুর ও আসবাব লুঠ করেন সারদার কিছু আমানতকারী ও এজেন্ট। কিছু আসবাব বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। ওই এলাকাতেই সারদার একটি আবাসন প্রকল্পেও চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের দাবি, মালদহে সারদা গোষ্ঠী যে ৩টি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল, সেগুলির সম্পত্তি আইন মোতাবেক বিক্রি করে টাকা ফেরত দিতে হবে।
একই দাবি বনগাঁ শহরেও। বনগাঁ-চাকদহ রোডের পাশে বনগাঁ টাউন হল ময়দানের কাছে সারদার ৭-৮ কাঠা জমি এবং ১টি দোতলা বাড়ি আছে। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যরা ওই জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন, ‘অসহায় মানুষের টাকা তছরুপকারী সারদা গ্রুপের এই জমি বিক্রয় হইবে না।’ ক্লাবের তরফে মলয় বসু বলেন, “এখানকার মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠ করেছে সারদা গোষ্ঠী। আমরা চাই, রাজ্য সরকার এই জমি অধিগ্রহণ করে তা বিক্রি করে আমানতকারীদের মধ্যে বিলি করুক।” বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের অবশ্য বক্তব্য, এ ধরনের নোটিসের কোনও মূল্য নেই।”
বোলপুর থানায় বিক্ষোভ সারদার এজেন্টদের। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
সারদা গোষ্ঠীর অন্যান্য কর্তা এবং আরও কিছু ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তাদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন এজেন্ট ও আমানতকারীদের একাংশ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব তাঁর দফতর থেকে বেরোতে গেলে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে মন্ত্রী অফিস থেকে বেরোন। সারদা-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি চেয়ে আলিপুরদুয়ারে কংগ্রেস ঘণ্টাদেড়েক পথ অবরোধ করে। কোচবিহারে জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখান সারদার এজেন্ট-আমানতকারীরা।
কাঁথি শহরে খড়্গপুর বাইপাসের ধারে পুলিশের সিল করে দেওয়া সারদার অফিস থেকে কম্পিউটার ও নগদ টাকা নিয়ে পালাচ্ছিলেন সংস্থার এজেন্ট জয়দেব মণ্ডল। বমাল ধরা পড়েছেন মঙ্গলবার রাতে। তাঁর কাছ থেকে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা, ৭টি কম্পিউটার ও অফিসের কিছু আসবাব উদ্ধার হয়েছে। কাঁথি থানার পুলিশ সারদার অন্য একটি অফিসে হানা দিয়ে একটি গাড়ি আটক করেছে।
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত ও নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে হাওড়ার পাঁচলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ৫০০ জন এজেন্ট। একই দাবিতে সারদার এজেন্টরা বিক্ষোভ দেখান বোলপুর থানায়।
হুগলির পোলবায় সারদার মোটরবাইক কারখানা ‘গ্লোবাল অটোমোবাইল’-এর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে বেশ কয়েক মাস। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা এ দিন শ্রমিক-বিক্ষোভের মুখে পড়েন। কারখানার কর্মী মাধব মাঝির কথায়, “আমরা বিদ্যুৎকর্মীদের বলি, আমাদের প্রতি মানবিকতা দেখান। আমরা এখানে রাত-পাহারা দিচ্ছি। বেতন নেই মাসের পর মাস। এই অবস্থায় লাইন কাটবেন না। পরিস্থিতি বুঝে ওঁরা চলে যান।” বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিয়য়টি জানানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.