সরকারি জমিতে আইটিআই কলেজ তৈরির অনুমোদন মিলে গিয়েছে। কিন্তু কয়েক জন কৃষকের বাধায় আটকে গেল তার কাজ।
নদিয়ার চাপড়ায় সীমান্ত সংলগ্ন শিকরা গ্রামের ওই খাস জমিতে এমএসডিপি প্রকল্পের টাকায় ওই কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ৪.৯৩ একর জমির সধ্যে তিন একর জমিতে কলেজ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ওই জমিতে একটি বিদ্যালয় ও আবাসন তৈরির পরিকল্পনাও আছে। প্রকল্প অনুমোদনও পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই মতো কাজ শুরু করতে গিয়েই হোঁচট খেল জেলা প্রশাসন। সরকারি জমিতে এত দিন যারা চাষ করছিলেন তাঁদের স্পষ্ট ঘোষণা, জমি দেবেন না। মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল ওই জমিতে মাটি পরীক্ষার জন্য গেলে স্থানীয় লোকেরা মারমুখী হয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেয়।
বুধবার হাটখোলা পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেস প্রধান হবিবুর রহমান খানকে নিয়ে এলাকায় যান চাপড়ার বিডিও রিনা ঘোষ। ওই কৃষকদের সঙ্গে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। কলেজের জন্য প্রস্তাবিত খাস জমি ছেড়ে দিলে ভূমিহীনদের অন্যত্র জমি দেওয়ারও প্রস্তাব দেন বিডিও। তাতে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বিডিওর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রয়োজনে উচ্ছেদ রুখতে আন্দোলনের হুমকিও দেন।
ওই এলাকায় সুনীল দাসের চার ভাইয়ের দু’বিঘা জমি আছে। সুনীলবাবু বলেন, “ওই জমিটুকুই আমাদের শেষ সম্বল। চল্লিশ বছর ধরে আমরা ওই জমিতে চাষ করছি। জীবন দিয়ে দেব, কিন্তু জমি ছাড়ব না।” একই ভাবে ওই জমির আর এক দিনমজুর প্রভুদান মণ্ডল বলেন, “ওই জমি চলে গেলে ছেলে মেয়েকে নিয়ে পথে বসতে হবে। দরকার হলে আন্দোলন করব, কিন্তু জমি দেব না।”
কিন্তু কলেজ না হলে এলাকার ছাত্রছাত্রীরাই কি বঞ্চিত হবেন না? পঞ্চায়েতের প্রধান হবিবুর রহমান খান বলেন, “ওই এলাকায় কলেজ হলে ভালই হয়। তবে এলাকার কৃষকরা জমি দিতে রাজি নন। ভূমিহীন কৃষকদের জন্যও বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।” বিডিও বলেন, “ওই খাস জমির ভূমিহীন কৃষকদের আমরা বিকল্প জমি দেওয়ার কথা বললেও তাদের রাজি করানো যাচ্ছে না। কিন্তু কলেজ করার মতো এক সঙ্গে এতটা জমি এখানে আর কোথাও নেই।”
জমি সংক্রান্ত এই সমস্যা নিয়ে সতর্ক শাসক দল। এলাকার বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, “আমরা চাই কলেজ হোক। তবে ভূমিহীন কৃষকদের ক্ষতি করে কোনও কিছু করা ঠিক হবে না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য আমি প্রশাসন ও কৃষক উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” সব মিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কলেজের ভবিষ্যৎ। |