পদ্মা-চরে বাড়ছে জাল টাকা পাচার
ধূ ধূ করছে পদ্মা। চর ও নদী একাকার। কোথাও হাঁটু জল। কোথাও তার চেয়ে একটু বেশি বা কম। সেইটুকু পেরোলেই আবার বালির চর। তার গা ঘেঁষেই গ্রাম। বৈশাখে সবই অনেক দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। কোথাও কোনও কৃষক গরু নিয়ে যাচ্ছেন পদ্মা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে তাঁর জমিতে চাষ করতে। কখনও ওই গ্রামের ছেলেমেয়েরা আসছে বালি পেরিয়ে এ পারের স্কুলে পড়তে। কেউ আসছেন বাজার করতে। কেউ ফিরছেন বাজার করে।
এই স্বাভাবিক জনজীবনের মধ্যেই কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে নানা রহস্য। মুর্শিদাবাদের শোভাপুর সীমান্ত লাগোয়া বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের হাবিবুর রহমান বলেন, “পদ্মার এই অবস্থার ফলে পাচারকারীরাও তাদের পদ্ধতি বদলে ফেলেছে। গরু পাচার এখন অনেকটাই কম। কেননা, এক সঙ্গে চারটে গরু নিয়ে কেউ গেলেই তা বহু দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। ফলে ধরাও পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেড়ে গিয়েছে জাল টাকার কারবার। শুকনো নদী খাত পেরিয়ে যারা যাচ্ছে-আসছে তাদের জামা কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে জাল টাকা চলে আসছে ভারতে।” সীমান্তরক্ষী বাহিনীও সে কথা স্বীকার করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ডিআইজি অমরজিৎ সিংহের কথায়, “গরু পাচার কমলেও জাল নোটের কারবার এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। আসলে কয়েক লক্ষ টাকার জাল নোট অনায়াসে বহন করা যায়।”
বৈশাখ মাসে হাঁটু জলে অবাধে পার হওয়া যায় পদ্মা।
নিমতিতা শোভাপুর লাগোয়া সীমান্ত এলাকায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার ধরে এখনও কাঁটা তার লাগানো হয়নি। এক দিকে বাংলাদেশ। অন্য দুই দিকে পদ্মা। বর্ষার সময়ে এই পদ্মাই জলে ভরে থাকে। কুলপ্লাবী সেই নদীতে সাধারণ ভাবে এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে জলে ভেসে যায় পাচারকারীরা। উথালপাথাল সেই জলের মধ্যে গরু বা পাচারকারী কাউকেই দূর থেকে ঠাওর করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগেই গরু পাচারও তখন বাড়ে। গ্রীষ্মে সেই অবস্থারই পরিবর্তন ঘটছে। চর আর নদীখাত মিশে যাওয়ায় কোথাও কোথাও চার কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া এলাকা খোলা পড়ে রয়েছে। শোভাপুর-দৌলতপুরের পঞ্চায়েত উপপ্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “এই এলাকায় জনবসতিও কম নেই। চরের গ্রামগুলিতে যাঁরা থাকেন বা যাঁরা নদী পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের জমিতে চাষ করতে যান, তাঁরা তো নিয়মিতই যাতায়াত করেন। তাই নিত্য বহু লোকই পায়ে হেঁটে ওই এলাকা পারাপার করেন। এর মধ্যে কে পাচারকারী আর কে নয়, তা কে বুঝবে?”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য বক্তব্য, এই এলাকায় অনেক গ্রাম এবং বিক্ষিপ্ত বসতি থাকলেও সাধারণত মানুষ একে অপরকে চেনেন। দ্রুত নগদ টাকা রোজগারের জন্য কে পাচার করছেন আর কে করছেন না, তা এলাকার মানুষ জানেন। অপরিচিত মুখ দেখলেও সে চিহ্নিত হয়ে যাবে।
এই সীমান্ত এলাকার মানচিত্র।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়নের কমান্ডিং অফিসার অরবিন্দ ঘোরডিয়ালও বলেন, “পাচারকারীদের ধরার জন্য এলাকায় জনসংযোগের উপরে তাই জোর দেওয়া হচ্ছে।” বিএসএফ সূত্রে খবর, এক জন রাখাল একটি গরু নিয়ে ওপারে পৌঁছে দিয়ে এলে বড়জোর হাজার খানেক টাকা মজুরি পায়। ওই বিএসএফ অফিসার বলেন, ‘‘এলাকায় আমরা একটা সমীক্ষা করেছি। তা থেকে বোঝা গিয়েছে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে পাচার অনেকটাই কমবে।”
ওই এলাকায় সাক্ষরতার হার কম। দারিদ্র বেশি। তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য তাঁরা সচেষ্ট। কিন্তু এখনও বিদ্যুৎই পৌঁছয়নি। ওই এলাকার বাসিন্দা শফর আলি বলেন, “স্কুল নেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই, যে কোনও কাজে গঞ্জে যেতে গেলে এই গরমে চার কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। আগে দরকার সেই অবস্থার উন্নয়ন। না হলে পাচার কমবে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও নগদ টাকা রোজগারের জন্য মানুষ পাচার করবেন।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.