বায়ার্ন মিউনিখ: ৪ (মুলার-২, গোমেজ, রবেন)
বার্সেলোনা: ০ |
ম্যাচটা টিভিতে দেখতে বসার সময়ই প্রশ্ন জাগছিল, মেসি খেলবে কি? বার্সার প্রাণভোমরা কি চোটমুক্ত? মেসি পুরো নব্বই মিনিট খেলল। তার পরেও ম্যাচটা দেখার পর মনে হচ্ছে বার্সা নয়। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দল বায়ার্নই।
বার্সা কোচ টিটো ভিলানোভা ‘আনফিট’ মেসিকে পুরো সময় মাঠে রাখার মাসুল দিলেন ম্যাচ হেরে। ইন্টারনেট ঘাঁটতে বসে দেখলাম, মেসি যে মঙ্গলবার আলিয়াঞ্জ এরিনায় নামবে তা বার্সা শিবির জানতে পারে খেলা শুরুর মাত্র এক ঘণ্টা আগে। ব্যাপারটা যেন এ রকম, মেসি আছে আর কী? যাব, দেখব আর জয় করব। কিন্তু ২৯ মিনিটে পেদ্রোর কাছ থেকে বল পেয়ে বায়ার্ন রক্ষণে এক বার হানা দেওয়া ছাড়া মেসি কিছুই করতে পারল না। বাকি সময়টা ওকে সাধারণের পর্যায়ে নামিয়ে আনল দাতে-বোয়াতেংরা। বল ধরা এবং ছাড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মেসি হ্যামস্ট্রিং চোট কাটিয়ে পুরো ফিট নয়।
মাঠে মেসিকে পেড়ে ফেলার জন্য বায়ার্ন কোচ হেইনকেস একটা নতুন ট্যাকটিক্স নিয়েছিলেন। মেসি বল ধরলে কেউ যেন হুড়মুড় করে ট্যাকলে না যায়। জায়গায় দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বলটাকে লক্ষ্য করে আর মেসিকে একদম উইংয়ের দিকে চেপে দেয়। বায়ার্ন কোচের এই জাল কেটে মেসি না পারল বেরোতে। না পেল পেদ্রোদের সহায়তা। এত মন্থর মেসিকে কবে দেখেছি মনে পড়ছে না। জাভি-বুসকেতসও কেমন যেন গতিহীন। মরিয়া চেষ্টাটা একমাত্র দেখা যাচ্ছিল ইনিয়েস্তা আর দানি আলভেজের মধ্যে। কিন্তু পেনিট্রেশন কোথায়? এত ব্যাক পাস! |
একটা জিনিস বোঝা গেল, বল পায়ে রেখে দিলেই ফুটবল হয় না। জিততে গেলে ফরোয়ার্ড পাস দরকার। যা প্রায় অদৃশ্যই হয়ে যাচ্ছিল বার্সার গেমমেকারদের পা থেকে। আর রক্ষণে পিকে আর বারতা এত নড়বড়ে যে, তার পুরো ফায়দা তুলে নিয়ে গেল মুলার, গোমেজরা। বিশেষ করে এরিয়াল বলে। ওদের সামলাতে গিয়ে বার্সার ওই দুই ডিফেন্ডারেরই আত্মবিশ্বাসে টান পড়ছিল। পিকে তো নিজের বক্সে হাতে বলই লাগিয়ে ফেলল। ভাগ্যিস তা রেফারির চোখ এড়িয়ে গেল।
হেইনকেস আরও একটা জায়গায় জোর দিয়েছিলেন। বার্সার মাঝমাঠকে খেলতে দেওয়া চলবে না। এটা বলা যেমন সহজ, করা ততটাই কঠিন। কিন্তু মাঠে সেটাই করে দেখাল বায়ার্ন। ৪-২-৩-১ ছকে সব সময় ব্যাক ফোরের আগে নিজের পাঁচ জন মিডফিল্ডারকে রেখে দিলেন হেইনকেস। যাদের মধ্যে সোয়াইনস্টাইগার, আর জাভি মার্টিনেজ যেন পকেট ডায়নামো। ইনিয়েস্তা-জাভিদের থেকে বল কেড়ে কিংবা ডিফেন্স থেকে আসা লুজ বলগুলো ধরে ওরা বাড়াচ্ছিল দুই উইঙ্গার রবেন এবং রিবেরিকে। আর ওদের বাড়ানো বল ধরে মুলার, গোমেজরা ঢুকে আসছিল বার্সা রক্ষণে। বায়ার্নের ব্রাজিলিয়ান সাইডব্যাক দাতে মুলারের প্রথম গোলটা সাজিয়ে দিল ওভারল্যাপে উঠে দুর্দান্ত হেডে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিজেদের বক্সে অসাধারণ ক্লিয়ার করতেও দেখলাম একই ছেলেকে। গোটা মাঠ জুড়ে বায়ার্নের এই গতিময় ফুটবল সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি মেসিদের।
ফিরতি ম্যাচটা ন্যু কাম্পে। বার্সার ঘরের মাঠে বলেই আগাম বলতে চাইছি না, বায়ার্ন ওয়েম্বলিতে যাচ্ছেই কি না। তবে যদি জার্মান ক্লাব ফাইনালে না যায়, তা হলে বলতে হবে ফুটবলে মেসির বার্সেলোনার শুধু অঘটন নয়, অলৌকিক কাণ্ড ঘটানোরও ক্ষমতা আছে। তবে তার আগে পুরো ফিট হয়ে উঠতে হবে কিন্তু ফুটবলের রাজকুমারকে।
|
চারের ধাক্কায় তিকিতাকা |
এফসি কোলন-৪ : বার্সেলোনা-০
(উয়েফা কাপ তৃতীয় রাউন্ড, ১৯৮০)
এসি মিলান-৪ : বার্সেলোনা-০
(ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনাল, ১৯৯৪) |
ডায়নামো কিয়েভ-৪ : বার্সেলোনা-০
(চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গ্রুপ ম্যাচ, ১৯৯৭)
বায়ার্ন মিউনিখ-৪ : বার্সেলোনা-০
(চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল, ২০১৩) |
পাস-ফেল
|
মঙ্গলবার রাতে আলিয়াঞ্জ এরিনায় বায়ার্ন ফুটবলারদের গড় রেটিং ১০-এ ৭।
বার্সা ফুটবলারদের সেখানে ১০-এ ৪.৫। |
মুলার বনাম মেসি |
মুলারের রেটিং ১০-এ ১০। মেসি সেখানে ১০-এ ৪।
মুলারের খেলা ৫৮টি পাসের ২৬টি বার্সা বক্সে।
মেসির খেলা ৭২টি পাসের মাত্র ২টি বায়ার্ন বক্সে। |
|