ক্রিস গেইলকে শেষ পর্যন্ত ওই কথাটা বলেই ফেললাম।
গেইল-সাইক্লোন নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে এক রকম রসিকতা শুরু হয়ে গিয়েছে আইপিএল দুনিয়ায়। কারও মেসেজ পাচ্ছি‘লোকটা এই গ্রহের তো? নাকি মঙ্গল গ্রহেও এখন ক্রিকেট হচ্ছে?’ একজনের এসএমএস পেলাম, ‘গেইলের ব্যাট ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর সঙ্গে ওর রক্ত পরীক্ষাও করা হোক।’ আরসিবি ম্যাচটা শেষ হওয়ার পর বেঙ্গালুরুতে মঙ্গলবার রাতে টিম হোটেলে প্রথম গেইলের সামনাসামনি হয়েছিলাম। আসলে দু’টিমের অনেকেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সেখানেই গেইলকে হাসতে হাসতে বলে দিলাম ওই কথাটা‘‘তুমি অন্য গ্রহের কেউ নয় তো?’’ গেইল এমনিতে খুব কম কথা বলে। বেশির ভাগ কথার জবাবেই ওর ট্রেডমার্ক হাসিটা হাসে। আমার কথাটারও কোনও উত্তর না দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
পুণে ওয়ারিয়র্সের ডাগআউটে অট্টহাসি না থাকুক, বিষণ্ণতাও কিন্তু নেই। আসলে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আমরা ভেবেই নিয়েছি, মঙ্গলবার চিন্নাস্বামীর বিকেলটা একটা সম্পূর্ণ আলাদা সময়। আইপিএলে তো বটেই, ক্রিকেট খেলাটা যত দিন থাকবে, এ রকম একটা ইনিংস আর কেউ কখনও খেলতে পারবে কি না সন্দেহ। এটা একটা অলৌকিক ব্যাটিংয়ের নিদর্শন। ‘ফ্রিক শো’। তা বলে আমরা কি গেইল-সাইক্লোনের সামনে আমাদের বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবিনি? অবশ্যই ভেবেছি। বিশেষ করে অ্যালান ডোনাল্ডের মতো কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার যেখানে পুণের হেড কোচ। আমাদের পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট কাল রাতে, এ দিন ব্রেকফাস্ট টেবিলেও আলোচনা করেছি। ডোনাল্ড প্রত্যেক বোলারের সঙ্গে কথা বলেছে। |
মুরলীর সঙ্গে গেইলের গ্যাংনাম। ছবি: পিটিআই |
আমি যেমন আমাদের বাংলার ছেলে অশোক দিন্দার সঙ্গে কিছু আলোচনা করেছি। দিন্দা কিন্তু ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত পেসার। সে জন্য এই ম্যাচটা নিয়ে ওর বাড়তি কাটাছেঁড়া করা দরকার। এবং সেটা দিন্দা করছে। আমাকেই যেমন বারবার বলল, “ওই নো বলটা করা আমার উচিত হয়নি। যার পরেই ফ্রিহিট-এ ছয় মেরে গেইল সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছিল। ওই সময় আমার মতো সিনিয়র বোলারের নো বল-টা দলকে আরও মানসিক চাপে ফেলে দিয়েছিল।’’ আমি অবশ্য বেশি ভাবছি এর পর আমাদের অনভিজ্ঞ তরুণ বোলারদের মানসিকতা কেমন থাকবে তা নিয়ে। ঈশ্বর পাণ্ডে-র মতো বোলারদের অবশ্য দুঃস্বপ্নের ম্যাচের পরের সকালে বেশ স্বাভাবিক মেজাজেই দেখলাম। ঈশ্বরের মঙ্গলবার ইকনমি রেট সাড়ে ষোলো। মুর্তাজার সাড়ে বাইশ। মিচেল মার্শের উনিশের কাছাকাছি। তা সত্ত্বেও আমি বলব, ওরা যেন চিন্নাস্বামীর ঘটনাটাই মাথা থেকে পুরো ঝেড়ে ফেলে দেয়। এ ছাড়া পুণের ডাগআউটের ‘গেইলাতঙ্ক’ কাটানোর আর কোনও রাস্তা আমি অন্তত দেখছি না।
আমাদের পরের ম্যাচ শনিবার। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার আমরা রায়পুর রওনা হচ্ছি। তার মানে আরসিবি ম্যাচের হ্যাংওভার কাটানোর বেশ ভাল সময় পাওয়া গিয়েছে। যে সুযোগ আইপিএলের ‘টাইট শিডিউলে’ সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু গেইল-সাইক্লোনের ধাক্কা সামলে পুণে ওয়ারিয়র্সকে গুছিয়ে তোলার দারুণ সুযোগ এসেছে। কে বলে ক্রিকেটদেবতা শুধু গেইলেই সদয়?
|
গেইলের খাদ্য |
ভুবনেশ্বর কুমার ৪-০-২৩-০ (গেইলকে ১১), ঈশ্বর পাণ্ডে ২-০-৩৩-০ (গেইলকে ২২),
অশোক দিন্দা ৪-০-৪৮-২ (গেইলকে ১৮), মিচেল মার্শ ৩-০-৫৬-১ (গেইলকে ৩৭), আলি মুর্তাজা ২-০-৪৫-০ (গেইলকে ৪৩), অ্যারন ফিঞ্চ ১-০-২৯-০ (গেইলকে ২৮), লুক রাইট ৪-০-২৬-১ (গেইলকে ১৬)। |
|