নাইটস আর কিংসদের ক্রিকেট যুদ্ধ দেখার জন্য অনেকেই আগামী শুক্রবার যাবেন ইডেন গার্ডেন্সে। তবে আশ্চর্য হবেন না যদি গিলি আর গম্ভীরের যুদ্ধের আগে হঠাৎ দেখেন ফারহান আখতার দর্শকদের মধ্যে সত্তর হাজার নকল গোঁফ বিতরণ করছেন! আর যদি শানকে শোনেন গান ছেড়ে আবৃত্তি করতে স্টেডিয়াম ভর্তি ক্রিকেট ফ্যানদের সামনে!
|
‘আবৃত্তিকার’ শান। |
পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার আসছেন কলকাতায়। এমএআরডি বা ‘মর্দ’ (মেন এগেইনস্ট রেপ অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন) বলে একটা প্রচারাভিযানের সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত ফারহান। দিল্লি ধর্ষণ কাণ্ড ফারহানকে ভীষণ ভাবে নাড়িয়ে দেয়। এতটাই যে, ফারহান সঙ্গে সঙ্গে একটা কবিতা লিখেছিলেন ওই বিষয়ে। নাম, ‘হোয়াট ইজ দিস কানট্রি আই লিভ ইন?’ তার পর জাভেদ আখতার ‘মর্দ’ বলে একটি কবিতা লেখেন। সেই কবিতারই বঙ্গানুবাদ করেছেন প্রীতীশ নন্দী। শাহরুখ খান এবং প্রীতি জিন্টা, দু’জনেই আছেন এই ‘মর্দ’ উদ্যোগের পাশে। এবং শুক্রবার শাহরুখ আর প্রীতির দলের টক্করের ঠিক আগে শান কবিতার ওই অনুবাদ পাঠ করবেন ইডেনে।
আইপিএল-এর মাঠ কি এতটা গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ঠিক জায়গা? শানের মতে এটাই আদর্শ জায়গা। “আইপিএল-এর মাঠে যে এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলা হবে, সেটা কেউ ভাবতেই পারবে না। আর তাই ধাক্কাটাও লাগবে বেশি।”
ফারহান আখতার আর বিদ্যা বালনের ‘শাদি কে সাইড এফেক্ট’-এর প্রযোজক প্রীতীশ ছবির কাজ শেষ করায় ব্যস্ত। “জানি না শুক্রবার খেলা দেখতে যেতে পারব কি না। তবে আমি ‘মর্দ’ ক্যাম্পেনটা সমর্থন করি।” শানের মতে, আমাদের দেশে পৌরুষের ব্যাখ্যাটাই কেমন বদলে গিয়েছে। “আজকাল দুঃসাহসকেই সাহস বলা হয়। অনেকেই মনে করেন যে, ভদ্রলোক হওয়া মানে ভিতু হওয়া। কারও সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহার করা মানে লোকে ভাবে এটা বোধ হয় যথার্থ পৌরুষের লক্ষণ নয়। এই ধারণাটা পাল্টানো দরকার। আসল পৌরুষের মানে হল কেউ ‘না’ বললে সেটা মেনে নিতে পারা।” |
‘মর্দ’ কয় কাহারে। নকল গোঁফ লাগিয়ে ফারহানের প্রচার অভিযানে সামিল শাহরুখ। |
প্রথম বাংলা অনুবাদটা বেশ কঠিন ভাষায় হয়েছিল। “অনুবাদটা সুন্দর ছিল ঠিকই। কিন্তু আমি এমন ভাষা চেয়েছিলাম যেটার সঙ্গে ইয়ুথ কানেক্ট করতে পারবে। বেশি কাব্যিক হলে মাঠে বসে শোনার ধৈর্য মানুষের না-ও থাকতে পারে। ফারহানকে আমি সেটা বলায় ঠিক হয় আবার একটা অনুবাদ করা হবে,” শান জানান।
গান গেয়েছেন প্রচুর। তবে কোনও অনুষ্ঠানে আবৃত্তি এই প্রথম। “হ্যাঁ, তা ঠিক। এমন একটা অনুষ্ঠানের জন্য ওরা এক জনকে চেয়েছিলেন যার ইয়ুথ-কানেক্ট রয়েছে। আর একটা ক্লিন ইমেজও। নিশ্চয়ই এমন কাউকে দিয়ে এই কাজটা হত না যার ওম্যানাইজার বলে একটা ইমেজ রয়েছে। লাইনগুলো বেশ সুন্দর অনুবাদ হয়েছে,” বলেন শান।
তার পর এসএমএস করে পাঠিয়ে দেন প্রীতীশের অনুবাদ করা লাইনগুলো— ‘যার চোখে চমকায় গভীর সত্যতা
যার চালচলনে সৌজন্যতা
যার ব্যবহার নম্র, যার কথা ভদ্র
যার হৃদয়ে, প্রতি কথায় নারীত্বের প্রতি আছে ইজ্জত
আছে আদর
যে নারীর শরীর মন প্রাণকে সম্মান করে
যে কখনও, কোনও মুহূর্তে ভোলে না নারীর আত্মসম্মান
যে নিজেকে চেনে
যার শক্তিও আছে
যার সাহসও আছে
যার গৌরব আছে, আত্মবিশ্বাসও আছে
সে যদি সঙ্গে থাকে
সে যদি পাশে থাকে
তার উপস্থিতিতে নারী সুরক্ষিত বোধ করে
সেই সে জন নারীর সত্যিই সঙ্গী, বন্ধু, সমব্যথী
সত্য তাই
সেই আসল পুরুষ।’ |