পনেরোটা বল।
শুধু ওই সময়টুকুর জন্য আজকের ইডেনে থাকা সার্থক।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটিং সবে শুরু হচ্ছে। কিন্তু সচিন স্ট্রাইক পাচ্ছেন না। ইডেন তখন অধৈর্য। গ্যালারিতে তখন সেই চির পরিচিত স-চি-ন, স-চি-ন চিৎকার। বোঝাই যাচ্ছে না তখন কলকাতা কাকে সাপোর্ট করছে-কেকেআর না বার্থডে বয়কে।
“আরে সচিন তো স্ট্রাইকই পাচ্ছে না। ভাল রান করলে করুক কিন্তু কেকেআর জিতুক”, নখ কামড়াতে কামড়াতে বলছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
আসলে আজকে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে থেকেই কলকাতার এই ধর্মসঙ্কট শুরু।
|
সিএবির উপহার-কেক কাটছেন বার্থডে বয়। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
‘ভগবান’ অবশ্য বেশি রান বানাননি কিন্তু দু’রান করেও ইডেন-এর স্ট্যান্ডিং ওভেশন অবশ্যই আজকের ম্যাচের “হাই টিআরপি মোমেন্ট”।
আসলে শাহরুখ খানের সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সিকিউরিটি গার্ডদের নিয়ে ঝামেলার পর থেকেই মুম্বই বনাম কেকেআর ম্যাচে ‘হাই টেনশন’ অবধারিত।
ম্যাচ তখনও শুরু হয়নি। প্ল্যাটিনাম বক্সের বাথরুমে দেখলাম জয় মেটা জোরে জোরে জলের ঝাপটা মারছেন মুখে। “খেলা শুরু হওয়ার আগে রোজ আমার এ রকম টেনশন হয় কিন্তু আজকে একটু বেশি। মুম্বই তো। উই হ্যাভ টু উইন দিস”, আনন্দবাজারকে বললেন জয়।
“সচিনকে কেকেআর-এর জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা কিন্তু আ ম্যাচ ইজ আ ম্যাচ’’, হেসে বলছিলেন জয়। তখনও ম্যাচ ৫০-৫০। হঠাৎ প্ল্যাটিনাম লাউঞ্জে হাজির শিবমণি। চলছে পার্কাশনের হাই ভোল্টেজ পারফরম্যান্স।
|
ইডেনের বিরোধী-বন্দনা! গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস পোস্টার নিয়ে। ছবি: উৎপল সরকার |
এক মনে খেলা দেখছিলেন গার্গী রায়চৌধুরী। “১৫ ওভারে তো দুটো টিম একই রকম। পোলার্ড আর রোহিত শর্মার উইকেটটা চাই-ই। টেনশন হচ্ছে খুব”, বলছিলেন গার্গী। তখনও ২৪ বলে ৩৬ বাকি। এর মধ্যেই ডিনার রুমে এলেন অনু মালিক। “আমি তো মুম্বই ইন্ডিয়ান্সদের দলে। আজকের ম্যাচে এসেছি কারণ আজকের দিনটা যে সচিনের”, স্যালাড আর চিকেন খেতে খেতে বলছিলেন অনু।
ইডেনও তখন চুপচাপ।
‘রেস্ট্রিকশন’-এর জন্য রাত দশটার পর ইডেনে আইপিএলের সেই চেনা থিম মিউজিক বা নতুন অ্যান্থেম জাম্পিং-ঝপাক, কোনওটাই বাজানো হচ্ছে না। “এটা কী নিয়ম বলুন তো। আইপিএলের ম্যাচে মিউজিক বাজবে না? রাত দশটার নিয়মটা বোগাস। লোকের তো ঘুম পেয়ে যাবে শেষের দিকে। ওয়াস্অ্যাপ-এ চ্যাট করতে করতে বলছিলেন সল্টলেক থেকে আসা এক যুবতী।
রাত তখন সাড়ে এগারোটা। আউট হলেন রোহিত শর্মা। ঘুমিয়ে পড়া ইডেন আবার উত্তেজিত। প্ল্যাটিনাম লাউঞ্জে তখন ঋতুপর্ণা বলছিলেন তাঁর দেরি হয়ে যাচ্ছে। “সারা দিন শুটিং করেছি। সারা রাত ফর্টিস হসপিটালে শুটিং করব। কিন্তু ইডেন ছেড়ে বেরতেই ইচ্ছে করছে না”, বলছিলেন ঋতু।
|
১৬ বলে তখন ১১। মিসফিল্ড করে তখন এক রান বেশি দিলেন ইউসুফ পাঠান। উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করে ফেললেন ঊষা উত্থুপ। ছয় মারলেন হরভজন। পোলার্ডের উইকেটের পর যে উত্তেজনা ছিল, তা যেন হঠাৎ উধাও। রায়ডুর চারে সব শেষ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বক্সে তখন চলছে উদ্দাম নাচ। পাশে কেকেআর লাউঞ্জে হতাশ দৃষ্টিতে ইডেনের দিকে তাকিয়ে অতিথিরা।
বৃষ্টি, দুর্দান্ত প্রথম ওভার, সচিনের স্ট্যান্ডিং ওভেশনের পরেও ইডেনকে সেই হতাশই হতে গল। বাড়ি যাওয়ার পথে শুধু শুনতে পেলাম কয়েকজন দর্শক নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, “কেকেআর জিতল না ঠিকই, কিন্তু ‘ভগবান’কে জন্মদিনের সেরা উপহার দিল কিন্তু সেই ইডেন”।
বুঝলাম, কলকাতা আছে কলকাতাতেই।
না, কলকাতা আছে সচিনেই। |