বার্থডে কেকের সঙ্গে উপহার পাঞ্জাবি
সচিন-সমুদ্রের জোয়ার ইডেন ভাসিয়ে শহরেও
ডেন জানে না, এই দেখাই শেষ দেখা কি না। জানে না, ক্লাবহাউসের লন দিয়ে আর কোনও দিন হেঁটে আসবে কি না ক্রিকেট জার্সি পরিহিত সাড়ে পাঁচ ফুটের চেনা অবয়ব। জানে না, আর কোনও দিন উইকেটের সামনে দেখা যাবে কি না বরাবরের পরিচিত সেই স্টান্স। জানে না, আর কোনও রূপকথার সকালে বা বিকেলে গ্যালারি ভাসবে কি না ‘স-চি-ন, স-চি-ন’ সমুদ্রগর্জনে।
বুধবারের বৃষ্টিভেজা ইডেনে সচিন-বরণে তাই কি বাড়তি আবেগ? কেউ তো জানে না, আবার কবে দেখা হবে! বা আদৌ আর দেখা হবে কি না! তিনি নিজেও হয়তো জানেন না, এটাই শেষ সাক্ষাৎ কি না।
দশ নম্বর জার্সি যখন ইডেনে নামছে, পঁয়ষট্টি হাজারের উন্মত্ত গর্জন শুনলে কে বলবে তিনি আজ বিরোধী দলে? কেকেআরের দুই আগ্নেয়াস্ত্র পাঠান-গম্ভীর নিমেষে ফুটনোট। দু’রানে বোল্ড হয়ে যখন ডাগআউটে ফিরছেন সচিন, তখনই বা কে বলবে ম্যাচটা ওয়াংখেড়ে নয়, ইডেনে হচ্ছে? ক্লাবহাউসের লোয়ার টিয়ারে বসা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও তো সচিন-ভক্তের মনের কথাটা বলে গেলেন, “আজ আউট হয়ে গেল, কী করা যাবে? তবে সচিন তো, পরের ম্যাচে ঠিক রান করে দেবে।” আর সচিনকে ঘিরে ইডেনের মেজাজ দেখলে মনে হবে দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে আসা কেউ নয়, তাদের সামনে আজ চব্বিশ বছরের তেন্ডুলকর।
স্বাভাবিক। প্রেক্ষাপট বিরল। মুহূর্তগুলোও তাই। জন্মদিনে শহরে তাঁর সশরীর উপস্থিতি আজ পর্যন্ত দেখেনি কলকাতা। শহরের ক্রিকেট ইতিহাসে এক অচেনা মাহেন্দ্রক্ষণ।
এবং এক জন ক্রিকেটারের চল্লিশতম জন্মদিন ঘিরে উৎসবের ব্যপ্তি যে উনিশ ঘণ্টা চলতে পারে, একমাত্র সচিন তেন্ডুলকরের পৃথিবীতেই বোধহয় সম্ভব। ঘুমিয়েছেন ক’ঘণ্টা সন্দেহ। বন্ধুদের আবদার, মিডিয়ার সস্নেহ অত্যাচার, টিমমেটদের ‘জ্বালাতন’— কোনটা বাদ গেল? সন্ধেয় সিএবি-র অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই কর্তাদের অনুরোধ, “এক টুকরো কেক খেয়ে যাও সচিন।” শুনে প্রায় আঁতকে উঠলেন মহানায়ক। বলে ফেললেন, “ক্ষমা করুন। সকাল থেকে যা মিষ্টি খেয়ে যাচ্ছি, এ বার না হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়!”

সচিন, কেক ও অঞ্জলি। বুধবারের কলকাতায় বিরল মুহূর্ত। ছবি: উৎপল সরকার
সকাল নয়। শহরের নতুন ‘অকাল অষ্টমী’ শুরু হয়েছিল নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট মেনে, মঙ্গলবার রাত বারোটায়। ট্রলি করে সচিনের ঘরে দমপখ্ত বিরিয়ানি, কাকোরি কাবাব ঢুকেছে। ঢুকেছে তিন আলাদা ফ্লেভারের কেক। আয়োজনের ঘটা দেখে নাকি আশ্চর্য হয়ে যান সচিনের স্ত্রী অঞ্জলি। রাতের প্রাইভেট পার্টিতে কাউকে কাউকে বলেও ফেলেন, এত দিন এ সব আমাকেই করতে হত। এখানে দেখছি সব রেডিমেড আয়োজন! রাত বাড়তে পার্টিতে ঢুকলেন হরভজন-রোহিত শর্মারা, বল্গাহীন আবেগ সঙ্গে নিয়ে। রাত বারোটার মাহেন্দ্রক্ষণে হাত বাঁধা পড়ল সচিনের। বাঁধলেন হরভজন। সচিনের মুখে কেক মাখিয়ে সর্দারের কৌতুক, ‘পাজি আপ তো আঙ্কল বন গয়ে হো!’
আঙ্কল? সত্যিই কি? সচিন নিজে মনে করেন না। তাঁর ভক্তরা মনে করেন না। কলকাতাও না। মহানায়ক বলেই দিলেন, “আমি মনে করি না আমি চল্লিশ। যে মুহূর্তে নিজের বয়স নিয়ে ভাবতে শুরু করব, মানসিকতাটাও সে রকম হয়ে যাবে। আমি নিজেকে উপভোগ করছি।” বুধবার সকালে টিম মেন্টর অনিল কুম্বলেও তো তাঁকে একই প্রেসক্রিপশন ধরিয়েছেন। সচিন একটু টেনস্ড ছিলেন। মিডিয়ার ভিড় ঘাড়ে নিয়ে এমন প্রকাশ্য জন্মদিন উদযাপনে অভ্যস্ত নন। নইলে আর কেন বলবেন, “কেক কাটা নিয়ে এতটা টেনশন কখনও হয়নি। এ বারই হচ্ছিল। আসলে এত জনের সামনে এ রকম অনুষ্ঠান খুব বেশি হয়নি। তবে ভরসা দিয়েছে অনিল ভাই। সকালে দেখা হতে ও বলল, চল্লিশ স্রেফ একটা সংখ্যা। সেটা নিয়ে বেশি ভাবতে যেও না।”
ভাবতে চান না বলেই বোধহয় মহানায়কের মন কিছুটা অন্য জগতে। প্রতিবন্ধী ভক্ত জীবনে ক্রিকেট খেলতে পারবে না জেনেও হাতে ধরে তাকে ক্রিকেটের ‘অ-আ-ক-খ’ শেখানো। তার ঠিকানা টুকে তাকে নিজের ব্যাট পাঠানোর প্রতিশ্রুতি, তার দিনটা অদ্ভুত ভাল করে দিয়ে বলে ফেলা, “তুমিই আমার এক নম্বর ফ্যান!” ম্যাচ শুরুর আগে আবার সচিনের চিন্তায় দেশ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার। কখনও আবার তার সঙ্গে হাতে হাত ধরে হাঁটে কলকাতা নিয়ে তাঁর আবেগ। কেক তো ছিলই, সিএবি-র পক্ষ থেকে সচিনের জন্মদিনে পাঞ্জাবিও দেওয়া হল। অঞ্জলির জন্য শাড়ি। অভিভূত সচিন যা দেখে বলে গেলেন, “কলকাতা বরাবরই আমার জন্য নতুন নতুন চমক নিয়ে আসে। এ শহরের ভালবাসা কোনও দিন ভুলব না।”
ক্রিকেট-দেবতার বিনয়ে আপ্লুত সিএবি। আর ইডেন? কবেই তো তাঁকে হৃদয় দিয়ে বসেছে।
দেখলে আশ্চর্যই লাগবে। কে বলবে বার্থডে বয়ের গায়ে বিরোধীর জার্সি? বরং মনে হবে গোটা দেশের সঙ্গে তিনি আজ কলকাতারও ‘ঘরের ছেলে’। বার্থডে বয়।

• প্রথম ইংল্যান্ড সফরে তো নিজের স্কুলের বই সঙ্গে নিয়ে এসেছিল সচিন। ক্লাস টেন-এ পড়ত। লিখত, খেত বাঁ হাতে কিন্তু ব্যাটিং, বোলিং সব ডান হাতে। তখনই বুঝলাম ও একজন জিনিয়াস, যার দু’হাতেই পাওয়ার রয়েছে।
• ব্র্যাডম্যানকে দেখিনি, কিন্তু সচিনের ব্যাটিং দেখেছি। আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান। মুকুটটা ওর মাথায় পরিয়ে দিন। ব্যাটিংয়ের রাজা সচিন।
• চল্লিশ বছর বয়সে স্বাগত। এখন আর দ্রুত রান করতে চেয়ো না। সিঙ্গলসেই থাকো।
• মাস্টার ব্লাস্টার তেন্ডলাকে ৪০তম জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তোমার দীর্ঘ জীবনের। দিনটা উপভোগ করো।
• ডিয়ার মাস্টার ব্লাস্টার, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ ঈশ্বর, এই দিনটার জন্য।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.