ল্যাপটপ আনিতে খাতা ফুরাইয়াছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশপ্রসাদ যাদব রাজ্যের দ্বাদশ শ্রেণির ২৬ লক্ষ স্কুলপড়ুয়ার প্রত্যেককে একটি ল্যাপটপ এবং দশম শ্রেণির ৩৪ লক্ষ পড়ুয়ার প্রত্যেককে একটি ‘ট্যাবলেট পি সি’ দান করিবার অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। অঙ্গীকারটি পালন করিতে গিয়া রাজ্য-বাজেটে ২৬২১ কোটি টাকা খরচ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু এখন শিক্ষা দফতরের শূন্য ভাণ্ডার প্রথম শ্রেণি হইতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বাৎসরিক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও উত্তরপত্র জোগানের অর্থও সঙ্কুলান করিয়া উঠিতে পারিতেছে না। রাজ্যের সব বিদ্যালয়কে বলিয়া দেওয়া হইয়াছে, শিক্ষকরা বাৎসরিক পরীক্ষার প্রশ্ন ব্ল্যাকবোর্ডে চক-খড়ি দিয়া লিখিয়া দিবেন এবং পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্রের কাগজ বাড়ি হইতে লইয়া আসিবে। নজিরবিহীন হুকুমনামা।
অথচ রাজ্যের প্রথম হইতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পরীক্ষাগ্রহণে সরকারের মোট ব্যয় হইত ৩৫ কোটি টাকা। যে রাজ্য একই সময়ে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ২৬২১ কোটি টাকা খরচ করিতে পারে, নিম্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য পরীক্ষাগ্রহণের সামান্য অর্থও তাহার কোষাগারে নাই? যদি ইহা সত্য হয় তবে মানিতেই হইবে, অগ্রাধিকারগুলি সম্পূর্ণ গুলাইয়া গিয়াছে। বুনিয়াদি শিক্ষা দফতরের সচিব সাফাই গাহিয়া বলিয়াছেন, নিম্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের বছরভর মূল্যায়ন চলিতে থাকে, তাহাদের জন্য আলাদা বাৎসরিক পরীক্ষা গ্রহণের কোনও রীতি নাই। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষা-অধিকর্তা জানাইয়াছেন, শিক্ষার্থীদের বাৎসরিক পরীক্ষাগ্রহণের রেওয়াজ আদৌ বন্ধ হয় নাই। অনুমান, শিক্ষা-সচিব তাঁহার রাজনৈতিক প্রভুদের বাঁচাইতেই অনৃতভাষণ করিতেছেন। তর্ক চলিবে। কিন্তু শিকড়ের প্রশ্নটি লইয়া ভাবনা প্রয়োজন সর্ব ক্ষেত্রে যথাযথ অগ্রাধিকার নির্দিষ্ট করার প্রশ্ন। ইহা কেবল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ল্যাপটপ প্রদান করিতে গিয়া বুনিয়াদি শিক্ষায় অবহেলার ব্যাপার নহে। ভারতের যে কোনও রাজ্যে, যে কোনও সরকারি কাজে কি যথাযথ অগ্রাধিকার মানিয়া কাজ হয়? প্রায়শই নহে। কোথাও স্বাস্থ্য বঞ্চিত হইয়া রাস্তার আলোর নকশা প্রাধান্য পাইয়া থাকে, কোথাও বা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা অপেক্ষা ভি আই পি’দের রক্ষণাবেক্ষণ অধিক গুরুত্বপূর্ণ হইয়া পড়ে। কেন্দ্র হইতে রাজ্য, দুই স্তরেই এই ঐতিহ্যের সাধনা চলিতেছে। অথচ ইহা এক বার কেহ ভাবিয়া দেখে না যে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বেশি প্রাধান্য পাইলেও তা সাফল্য লাভ করে না। বাড়ির ভিত শক্ত না করিয়া জাঁকজমক করিয়া সাতমহলা বানাইলে তাহা ঝড়ঝঞ্ঝা তো দূরস্থান, জোর হাওয়ার মুখেও দাঁড়াইয়া থাকিবে কি? বুনিয়াদি শিক্ষার প্রসার না হইলে আশঙ্কা থাকিয়াই যায় যে, পড়ুয়ারা ল্যাপটপের প্রয়োজনীয়তা জানিবে না এবং তাহা কেবলমাত্র অল্প বয়সে বিনোদনের যন্ত্র হইয়া দাঁড়াইবে। অতএব, কোন কাজটি কতটা অগ্রাধিকার পাইবে, তাহা নির্দিষ্ট করাই প্রথম কাজ। সর্বাগ্র-অধিকার তাহারই প্রাপ্য। |