মৌসুমি বায়ু-পথে বাধা উত্তরের ঠান্ডা
নাছোড় বসন্ত স্বস্তি দিলেও বর্ষায় বিলাপের আশঙ্কা
মাঝ বৈশাখেও যেন বাংলার পিছু ছাড়ছে না বসন্ত! ফলে এই মুহূর্তে অস্বস্তি না-বাড়ছে না ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বর্ষা-ভাগ্য কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বস্তুত এই মরসুমের দীর্ঘস্থায়ী বসন্ত বৈশাখের চেনা গ্রীষ্মের ছবিটাই বদলে দিয়েছে। দিনের বেলায় পারদ চড়ছে না, অন্য দিকে রাত বাড়লে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে স্বাভাবিকের অনেক নীচে। গত ক’দিন যাবৎ দক্ষিণবঙ্গে তো রীতিমতো মনোরম পরিবেশ! প্রায় ফি সন্ধ্যায় দমকা হাওয়া-বৃষ্টিতে গরম উধাও। রাতভর ফ্যান বা এসি চালাতে হচ্ছে না। এমনকী, ভোরের দিকে গায়ে চড়াতে হচ্ছে হাল্কা চাদর!
শেষ এপ্রিলে এমন আবহাওয়া শেষ কবে দেখেছে কলকাতা?
সাধারণ মানুষ তা নিয়ে জল্পনা করুন। তবে দিল্লির মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহাওয়ার এই পরিবর্তনটা শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা তার আশপাশে সীমাবদ্ধ নয়। তা দেখাচ্ছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতেও। সাধারণত অন্যান্য বছর এপ্রিল পড়তে না-পড়তেই হরিয়ানা-পঞ্জাব-রাজস্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে যায়। এ বছর সেখানে এপ্রিলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কম। আবহবিদদের একাংশের আশঙ্কা, এমন চললে শেষ পর্যন্ত বর্ষা ভোগাতে পারে। কেন?
ওঁদের ব্যাখ্যা: উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা না-বাড়লে সেখানে সে ভাবে গরম হাওয়া তৈরি হবে না। গরম হাওয়া উপরে না-উঠলে পরিমণ্ডলে সৃষ্টি হবে না শূন্যস্থান, যা টানতে পারে জলীয় বাষ্পপূর্ণ ঠান্ডা হাওয়া। মৌসুমি বায়ুর স্বাভাবিক গতিপথ বজায় রাখতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ শীতল বাতাসের বিস্তর ভূমিকা। এতে তারতম্যের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গের বর্ষা-ভাগ্যও ওঠা-নামা করবে বলে আবহবিদদের এই অংশের দাবি।
মৌসম ভবন জানাচ্ছে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রীষ্মের ভোলবদলের পিছনে রয়েছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন। যার জেরে এপ্রিলেও পরের পর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এসে কাশ্মীরে ঢুকছে, উপত্যকায় বরফ পড়ছে। ফলে তামাম উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না। কেন্দ্রীয় আবহ-বিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (জলবায়ুবিদ্যা) বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সুবাদে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতের শেষ পর্যায়ের আবহাওয়াটাই রয়ে গিয়েছে। গ্রীষ্মের স্বাভাবিক গরম টের পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তর ভারত থেকে সেই ঠান্ডা বাতাস পূর্ব ভারতে নেমে নেপালের দিকে সরে যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে তার প্রভাব পড়ছে।”
দক্ষিণবঙ্গে অবশ্য ব্যাপারটা কিছুটা আলাদা। এপ্রিলের গোড়ায় দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তাপপ্রবাহ শুরু হলেও চলতি মাসের মাঝামাঝি এই অঞ্চলের উপরে একটা নিম্নচাপ-অক্ষরেখা হাজির হয়েছিল। তা পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্পও টেনে আনছিল পরিমণ্ডলে। তাতেই গ্রীষ্মের দাপট রুখে গিয়েছে। “ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণাবর্ত ও দক্ষিণবঙ্গের জলীয় বাষ্পের জোড়া ফলায় ঝড়-জল হচ্ছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা না-বাড়ার রহস্যটা লুকিয়ে রয়েছে এখানেই।” বলছেন আলিপুরের এক আবহবিদ।
কী রকম? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সন্ধের বৃষ্টির পরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় তাপ বিকিরণের দৌলতে রাতের তাপমাত্রা কমছে। বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের পাঁচ ডিগ্রি কম। গত এক সপ্তাহ ইস্তক গোটা দক্ষিণবঙ্গেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে। দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলায় গত এক সপ্তাহে বৃষ্টিও হয়েছে স্বাভাবিকের বেশি।
কাজেই ভরা গ্রীষ্মে বসন্তের স্বস্তি। কিন্তু পরিবেশের এ হেন ভোলবদল স্বাভাবিক বর্ষার উপরে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ঘটনাচক্রে গত ক’বছর ধরে বর্ষার ক্যালেন্ডারেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্ষার আগমন-প্রস্থানের নির্ঘণ্ট পিছিয়েছে কিছুটা। তার উপরে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের ঠান্ডা স্থায়ী হলে বর্ষা যথেষ্ট প্রভাবিত হবে বলে আবহবিদদের অনেকেরই আশঙ্কা।
বিশ্বজিৎবাবুর অবশ্য দাবি, “বর্ষা আসার পিছনে আরও বেশ ক’টা সূচক কাজ করে। যেমন প্রশান্ত মহাসাগর-অতলান্তিক মহাসাগরের উপরে বায়ুপ্রবাহের অবস্থা, কিংবা সমুদ্রের জলতলের তাপমাত্রা কত। সেগুলো এখনও বর্ষার স্বাভাবিক আগমনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।” কিন্তু উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের তাপমাত্রা না-বাড়লে?
বিশ্বজিৎবাবুর জবাব, “মনে হয় না, এই অবস্থাটা বেশি দিন থাকবে। তাই এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।”

পারদে ভেল্কি
শহর তাপমাত্রা*
কলকাতা ৩৫.৪ (০)
দিল্লি ৩৭ (০)
জয়পুর ৩৬ (-১)
পটনা ৩৩ (-৪)
রাঁচি ৩২ (-৩)
* বুধবারের সর্বোচ্চ, ডিগ্রি সেলসিয়াসে
বন্ধনীতে, স্বাভাবিকের কত কম


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.