গ্রেওয়ালকে পুলিশে দিয়ে ‘ঢাল’ তৈরি কারাটের
ঙ্গ ব্রিগেডের চাপের মুখে দলের মধ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ দিল্লির নেতাদের আত্মরক্ষার কৌশল ঠিক করে দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটই!
দিল্লিতে যোজনা কমিশনের সামনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় দু’দিন আগে গ্রেফতার হয়ে যাঁরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিপিএমের দিল্লি রাজ্য কমিটির সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়ালও। অথচ অমিতবাবুকে গ্রেওয়াল নিজে হেনস্থা করছেন, এমন কোনও ফুটেজ কোথাও পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ তেমন কথা বলেননি। এমনকী, এ রাজ্যের আক্রান্ত মন্ত্রীরাও কেউ কারাট-ঘনিষ্ঠ এই নেতার নামে কোনও অভিযোগ করেননি! তা হলে পুলিশের হাতে কেন গ্রেওয়াল? এখানেই কারাটের চাল দেখছে দলের একাংশ!
সিপিএম সূত্রের খবর, দিল্লি রাজ্য কমিটির দফতরে গিয়ে দিল্লি পুলিশের তরফে গত ৯ এপ্রিলের ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছিল। তখনই নিগ্রহকারীদের তালিকায় নিজের নাম সকলের আগে ঢুকিয়ে দেন গ্রেওয়াল। তাঁর যুক্তি, দলের আন্দোলনকারী কর্মীদের গ্রেফতার করতে হলে তাঁদের নেতা হিসাবে সকলের আগে তাঁকে ধরতে হবে! এতে যেমন রাজ্য কমিটির সম্পাদক হিসাবে দলে তাঁর ‘মর্যাদা’ বেড়েছে, তেমনই সুবিধা হয়েছে সাধারণ সম্পাদকেরও। কেন্দ্রীয় কমিটির আসন্ন বৈঠকে আলিমুদ্দিন এবং কেরলের প্রশ্নের মুখে পড়লে কারাট বলতে পারবেন, তিনি কাউকে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করছেন না। গ্রেওয়াল গোটা পর্বটিই দলের শীর্ষ নেতার অনুমোদন এবং পরামর্শ সাপেক্ষে সম্পন্ন করেছেন বলেই দলীয় সূত্রের খবর।
ধৃতদের মধ্যে ছিলেন দিল্লির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং মহিলা সমিতির নেত্রী আশা শর্মা। তাঁকে সে দিন অমিতবাবুর নিগ্রহের সময় ফুটেজে দেখা গিয়েছিল। এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছিল। তিনি নিগ্রহে জড়িত ছিলেন না বলে জানিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও গ্রেফতারের হাত থেকে রেহাই পাননি। গ্রেওয়াল যোজনা ভবন চত্বরে উপস্থিত ছিলেন বলে দিল্লির সিপিএম সূত্রের বক্তব্য। কিন্তু নিগ্রহে তিনি ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে বরং অভিযোগ ছিল দলের অন্দরে। ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতে দিল্লি রাজ্য কমিটি জড়িয়ে গিয়ে কেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেল, প্রশ্ন উঠেছিল তা-ই নিয়ে। সেই প্রশ্ন মোকাবিলার সময়েই পুলিশের কাছে নিজের নাম দিয়ে ‘দায়িত্ববান’ নেতা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন গ্রেওয়াল। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “কর্মী-সমর্থকদের মনোবল যাতে ধাক্কা না-খায়, তার জন্যই সংশ্লিষ্ট কমিটির নেতা হিসাবে তিনি সব দায়িত্ব নিয়েছেন।”
বিক্ষোভের নামে জঙ্গিপনার পরিকল্পনার জন্য গ্রেওয়ালের বিরুদ্ধে অবশ্য ক্ষোভ রয়েছেই দলের একাংশের। দিল্লি রাজ্য কমিটি যাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক স্তরে ব্যবস্থা নেয়, সেই নির্দেশও বহাল রয়েছে। তবে এখন গ্রেওয়ালের জন্য ঢাল হিসাবে এই যুক্তি হাজির হয়েছে যে, তিনি দায় এড়িয়ে পালাননি! আর এই ঘটনাপ্রবাহে দলের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে। সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, সে দিন নিগ্রহ-স্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে ওই নেতার স্ত্রীকেও ফোনে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। যে ঘটনায় সামগ্রিক ভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতি হয়েছে, তার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সকলকেই সতর্ক করার জন্য ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না, প্রশ্ন রয়েছে আলিমুদ্দিনে।
যে ঘটনার প্রতিবাদে দিল্লির ওই বিক্ষোভ, সেই সুদীপ্ত-কাণ্ড অবশ্য এখন চাপা পড়ে গিয়েছে আর এক সুদীপ্ত-কাণ্ডে! এমতাবস্থায় এসএফআইয়ের আইন অমান্যে গিয়ে প্রাণ হারানো সুদীপ্ত গুপ্ত ও হাতে মারাত্মক চোট-পাওয়া জোসেফ হোসেনের বাবা প্রণব গুপ্ত ও আজাদ হোসেন যৌথ ভাবে রাজ্যপালের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। সুদীপ্তের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি স্মরণ করিয়ে দিয়ে দুই ব্যথিত পিতা লিখেছেন, দিল্লির ঘটনা সত্যিই অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। কিন্তু কেন পুলিশের কথা না-শুনে সে দিন মন্ত্রীরা অন্য গেট দিয়ে যোজনা ভবনে ঢুকলেন না, সেই প্রশ্নও তাঁরা তুলেছেন। দিল্লি-কাণ্ডের জেরে রাজ্য জুড়ে যে ব্যাপক হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয়েছে, তাতে আক্ষেপ করেছেন তাঁরা। সঙ্গে লিখেছেন, ‘রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে এই ধরনের খোলা চিঠি লেখার জন্য আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কোনও দুরভিসন্ধি থেকে এই চিঠি নয়। আমাদের আজ বড় সংশয়। তাই নিরুপায় হয়ে এই চিঠি’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.