রাজ্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে নানা সংস্থার স্থায়ী আমানতের কয়েকশো কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় নড়েচড়ে বসল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। সদর দফতরের নির্দেশে ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিস পেতে তদন্ত চালিয়েছে আরবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতর। খতিয়ে দেখেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের তথ্যপঞ্জী (কেওয়াইসি)। তবে তদন্তে কী মিলেছে, তা জানাতে চাননি শীর্ষ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে আরবিআইয়ের আঞ্চলিক অধিকর্তা বি পি কানুনগো জানান, প্রাথমিক রিপোর্ট তাঁদের সদর দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো বিত্ত নিগমের ইউকো ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতে রাখা ১২০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা জনসমক্ষে আসার পরে হইচই শুরু হয়। তদন্তে জানা যায়, ভুয়ো অ্যাকাউন্টে সেই টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এটা জানার পর রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কও ২০ কোটি করে ইউকো ও ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কে (আইওবি) স্থায়ী আমানত হিসাবে গচ্ছিত রাখা মোট ৪০ কোটি টাকার খোঁজখবর করে। এবং জানতে পারে, সেই টাকাও তাদের অ্যাকাউন্টের বদলে ভুয়ো অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। আইওবি-র ভুয়ো অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত টাকা লোপাট না-হলেও ইউকো ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতে রাখা সমবায় ব্যাঙ্কের টাকাও একই ভাবে উধাও হয়ে যায়।
বস্তুত, অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে কেওয়াইসি আবেদনপত্রে গ্রাহকদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর কথা। এবং সেই তথ্য যাচাই করার পরেই অ্যাকাউন্ট খুলতে দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের। একের পর এক এ ধরনের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় তাই প্রশ্ন ওঠে, এই নিয়ম থাকা সত্ত্বেও কী করে ভুল তথ্য দিয়ে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব? সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের একাংশের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল ওঠে।
বুধবার বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের এক সভায় আরবিআইয়ের আঞ্চলিক অধিকর্তা কানুনগোকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ ভাবে টাকা তছরুপের ঘটনার জেরে সদর দফতর নির্দেশ দেয় পরীক্ষামূলক ভাবে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কেওয়াইসি সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার খতিয়ে দেখতে (স্ক্রুটিনি)। তাঁরা বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কেই তা করেন। কোন কোন ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো হয়েছে, তা অবশ্য খোলসা করে জানাননি তিনি। তবে ইঙ্গিত দেন, অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ছাড়াও তালিকায় রয়েছে আরও কিছু ব্যাঙ্ক। এ দিকে, ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থার কারবার নিয়েও রাজ্যে শোরগোল চলছে। তবে সেগুলির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আরবিআইয়ের নেই বলে দাবি ওই কর্তার। কানুনগো জানান, ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থা (এন বি এফ সি) নিয়ন্ত্রণে রাজ্য স্তরে যে- কমিটি রয়েছে, তা ছ’মাস অন্তর বৈঠকে বসে। আরবিআই ছাড়াও রাজ্য সরকার, সেবি, রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ, ন্যাশনাল হাউসিং ব্যাঙ্ক ইত্যাদির প্রতিনিধিরা এর সদস্য। কানুনগোর দাবি, ওই বৈঠকে কখনও- সখনও ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রসঙ্গ উঠলেও আরবিআইয়ের করণীয় কিছু নেই এতে। তবে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের সহযোগিতায় তাঁরা এ নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়েছেন। |