সারদা গোষ্ঠীর যে সব এজেন্ট এবং আমানতকারী সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন, তার দায় সারদা গোষ্ঠীর প্রধান সুদীপ্ত সেনের উপরেই চাপাতে চায় পুলিশ। যে সব এলাকায় ওই সব ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মৃতের পরিবারকে দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। ওই সব মামলায় সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধেই সরাসরি অভিযোগ আনা হবে বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর।
শুধু তাই নয়, সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধে ১৪ বছরের পুরনো একটি খুনের মামলাও পুনরুজ্জীবিত করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থানা এলাকায় ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে খুন হন বিশ্বনাথ অধিকারী নামে এক ব্যক্তি। সেই মামলায় সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে অভিযুক্ত করেনি পুলিশ। নতুন পরিস্থিতিতে সুদীপ্তবাবুকে অভিযুক্ত করে সেই মামলাটি ফের আদালতে তোলা হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে বুধবার পর্যন্ত সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় ছ’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি দায়ের করা হয় ১৬ এপ্রিল। অভিযোগকারিণী নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ। তিনি সারদা গোষ্ঠীর একটি চ্যানেলের প্রাক্তন কর্মী। বেতন না পাওয়ার অভিযোগে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন বলে জানা গিয়েছে। ওই একই থানায় একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে ফের ১৯ এপ্রিল সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা। বুধবার সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও সারদা রিয়েলটির আমানতকারীরা আরও দু’টি অভিযোগ দায়ের করেন। এই ছ’টি অভিযোগের ভিত্তিতেই আপাতত সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০ এবং ৫০৬ ধারায় বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৬ ধারাটি জামিনযোগ্য।
পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, সুদীপ্তবাবু এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, সত্য গোপন করে প্রতারণা, জমির দলিল বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি নকল করা এবং কারচুপির অভিযোগও আনা হতে পারে। বেআইনি ভাবে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কিছু অভিযোগও আসতে পারে। নিজেদের আইনে মামলা করতে পারেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষও। যেমন যেমন অভিযোগ মিলবে, সেই মতো নতুন অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর। সারদার সব ধরনের টাকার ‘আউট ফ্লো’ এবং ‘ইন ফ্লো’ বন্ধ করা হয়েছে। এই সংস্থার তিন মাসের অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। রাজ্যে চলচ্চিত্র উৎসবের সময় বেশ কিছু নৈশভোজের দায়িত্ব নিয়েছিল সারদা গোষ্ঠী। সেই টাকা কাকে কোথায় দেওয়া হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন ওঠে জঙ্গলমহলে ওই গোষ্ঠীর অ্যাম্বুলেন্স দান প্রসঙ্গেও। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্স সাধারণ মানুষের কাজে লাগছে। তা নিয়ে তদন্ত করলে তো তদন্ত শেষ হবে না! শিলিগুড়িতে সারদা একটি স্কুলও চালায়। তা হলে সেটাও বন্ধ করে দিতে হবে!”
|
যে সব ধারায় মামলা |
ধারা |
অভিযোগ |
সর্বোচ্চ সাজা |
৪০৬ |
বিশ্বাসভঙ্গ |
তিন বছর জেল |
৪২০ |
প্রতারণা |
সাত বছর জেল |
৫০৬ |
ভয় দেখানো |
দু’বছর জেল |
আইনজীবীরা বলছেন
আরও যে ধারা যুক্ত হতে পারে |
ধারা |
অভিযোগ |
সর্বোচ্চ সাজা |
১২০ বি |
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র |
অপরাধের গুরুত্ব বুঝে |
৪২১ |
সত্য গোপন করা |
দু’বছর জেল |
৪৬৭ |
জমির দলিল/নথি নকল |
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড |
৪৬৮ |
প্রতারণার জন্য কারচুপি |
সাত বছর জেল |
|
মামলা হতে পারে যে সব আইনে
• চিটফান্ড অ্যাক্ট (১৯৮২)
• প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (২০০২)
• প্রাইজ চিটস অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন
অ্যাক্ট (১৯৭৮)
মামলা করতে পারে
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক • সেবি • প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ |
|
|