সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। ধৃতের নাম বদরুদ্দিন শেখ। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, কাটোয়ার বাসিন্দা রাজু বিশ্বাস নামে এক যুবক মঙ্গলবার ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার পরেই পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামের বাসিন্দা বদরুদ্দিনকে ধরে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারো জন যুবক পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, চাকরি দেওয়ার নামে বদরুদ্দিন ও তাঁর ছেলে সুমন শেখ লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখন আর সেই টাকা ফেরত দিতে চাইছে না। কাটোয়ার কাঁঠালবেড়িয়া গ্রামের রাজুবাবু পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী স্টেশন বাজার এলাকায় বদরুদ্দিনের একটি ফটোকপি করার দোকান রয়েছে। সেখান থেকেই নানা এজেন্ট মারফত সে বেকার যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। বারার কারবারে সাহায্য করত সুমন। অভিযোগকারী যুবকদের দাবি, ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত কৃষিবিকাশ শিল্পকেন্দ্রে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নেয় বদরুদ্দিন। প্রতিটি ব্লকে ১৪ জন করে কর্মী নিয়োগ হবে দাবি করে অনেকের কাছে এই টাকা নেয় সে। চাকরি পেতে তাকে টাকা দেওয়া কয়েক জন যুবককেই আরও প্রার্থী জোগাড়ের দায়িত্ব দেয় বদরুদ্দিন। সে জন্য তাঁদের কমিশনও দেয়। কয়েক কিস্তিতে টাকা নেওয়ার পরে একটি কার্ড দিত সে। তাতে ওই প্রার্থী কোথায় চাকরি পাবে সে ব্যাপারে কিছু তথ্য থাকত। |
পূর্বস্থলীর মেড়তলা গ্রামের বাসিন্দা গৌর দাসের দাবি, “চাকরির আশায় অনেকে ঘটিবাটী বেচেও টাকা দিয়েছিল।” চণ্ডীপুর গ্রামের শরদিন্দু ঘোষের কথায়, “চাকরি পাওয়ার লোভে গয়না বন্ধক রেখে লক্ষাধিক টাকা দিয়েছিলাম। আমার মতো অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি, ওই প্রতারকের শাস্তি চাই।” এই যুবকদের দাবি, বদরুদ্দিন মাঝে-মধ্যেই তাঁদের কাছে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড-সহ নানা পরিচয়পত্র চাইত। কবে চাকরি মিলবে, তা জিজ্ঞাসা করলে নানা সময়ে নানা তারিখ বলত সে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারবার জিজ্ঞাসা করেও চাকরি না মেলায় সম্প্রতি বদরুদ্দিনের উপরে সন্দেহ হয় প্রতারিত যুবকদের। কয়েক মাস আগে থেকে তাঁরা টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন। সে ব্যাপারেও নানা তারিখ দিতে শুরু করে বদরুদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে বাজার কমিটি হস্তক্ষেপ করলেও কোনও ফল হয়নি। তাই ওই যুবকেরা থানায় যান। বদরুদ্দিনের গ্রেফতারের খবর পেয়ে বুধবার থানায় জড়ো হন নাদনঘাট, মন্তেশ্বর, কাটোয়ার প্রচুর যুবক। তাঁরাও দাবি করেন, বদরুদ্দিনকে টাকা দিয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এর পিছনে কোনও চক্র রয়েছে। বুধবার কালনা আদালত ধৃতকে দশ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। পুলিশ জানায়, বদরুদ্দিনের ছেলে সুমন পলাতক। তার খোঁজ চলছে। |