সপ্তম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের আংশিক সময়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার রায়গঞ্জ ব্লকের রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহারাজাহাট হাইস্কুলে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর ওই ছাত্রী গত সোমবার সন্ধ্যায় বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষিকা, তাঁর আত্মীয় তথা রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেসের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পড়া মুখস্থ করে না যাওয়ায় ওই কিশোরীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম পিয়ালি দত্ত। তিনি স্কুলের ইতিহাস বিষয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষিকা। পঞ্চায়েত সমিতির অভিযুক্ত কর্মাধ্যক্ষর নাম নিত্যানন্দ সরকার। সম্পর্কে তিনি পিয়ালিদেবীর কাকা। ওই ছাত্রীর নাম সাবিত্রী প্রামাণিক। প্রত্যেকেরই বাড়ি মহারাজাহাট এলাকায়। রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি প্রসাদ প্রধান বলেন, “পিয়ালিদেবী ও নিত্যানন্দবাবুর নামে মারধর ও হুমকির অভিযোগ রয়েছে। এখনও মামলা শুরু করা হয়নি। পুলিশ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।” উত্তর দিনাজপুর জেলা স্কুল পরিদর্শক নারায়ণ সরকার প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। |
ছাত্রীর মা লক্ষ্মীদেবীর অভিযোগ, “পড়া মুখস্থ করে না যাওয়ায় গত শুক্রবার ক্লাস চলাকালীন পিয়ালিদেবী মেয়েকে চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালে ঠেসে ধরে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। তার পরে সাবিত্রীকে স্কুলে আটকে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে স্কুলে গিয়ে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসি।” তিনি বলেন, “প্রথমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। অসুস্থ হওয়ায় শনিবার রায়গঞ্জ হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করা হয়। বিকালে ছুটি হয়। সোমবার ফের মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো-সহ নানা জায়গায় ব্যথার কথা বলায় ফের ওকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানাজানি হতেই নিত্যানন্দবাবু বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমাদের বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দেন। পুলিশকে জানালে ফল ভাল হবে না বলে শাসিয়েও যান।”
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাবিত্রী বলে, “পড়া মুখস্থ না করায় পিয়ালিদি লাঠি দিয়ে মারে। চুল ধরেও টানাটানি করেছেন, তার পর থেকে মাথাব্যথা ও মাথা ঘুরছে।” অভিযুক্ত পিয়ালীদেবী বলেন, “সাবিত্রীকে মারধর করিনি। ক্লাস ছেড়ে বাইরে বার হয়ে যাওয়ায় তাকে ধমক দিই।” আর তাঁর কাকা নিত্যানন্দবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল ষড়যন্ত্র করছে। পুলিশের তদন্ত করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
ব্লক তৃণমূল সভাপতি রজত ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “স্রেফ মানবিক কারণে ওই ছাত্রীর সুচিকিৎসার জন্য পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছি। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা না হলে দলের তরফে আন্দোলনে নামা হবে।”
রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে সঞ্জয় শেঠের অধীনে সাবিত্রীর চিকিৎসা চলছে। সঞ্জয়বাবু জানান, সাবিত্রীর শরীরে আঘাত পাওয়া যায়নি। মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যা থাকায় সিটি স্ক্যান এবং ইইজি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আতঙ্ক কিংবা ভয়ের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। |