সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার পালিয়ে যাওয়ার পরে অন্যান্য ভুঁইফোঁড় বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে পুলিশ। উত্তরবঙ্গের সব জেলার পুলিশ ওই তালিকা তৈরি করছে। পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও মালদহে কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সংস্থাগুলির কাছে লাইসেন্স সংক্রান্ত নথিপত্রও তলব করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ির এসডিও রচনা ভকত চার্চ রোডের একটি সংস্থার নথিপত্র তলব করেছেন। ওই সংস্থায় আমানত বর্তমানে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, ২ এপ্রিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের অফিসে একটি বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী সব কটি বেসরকারি ভুইঁফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার নথিপত্র খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। সেই মতো কাজ হচ্ছে বলে জেলাশাসক জানান। |
মঙ্গলবার সকালে আলিপুরদুয়ার মাধব মোড় এলাকার একটি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার অফিসে গিয়ে দেখা যায় সেখানে তালা ঝুলছে। আলিপুরদুয়ার চৌপথী এলাকার একটি অফিসে মাস দুয়েক ধরে অমানতকারীদের টাকা ধীর গতিতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া জানান, বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারী সংস্থার বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সারদা গোষ্ঠীর কান্ডের পর অর্থলগ্নিকারী সংস্থার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মহকুমার ২০-২২টি সংস্থার তালিকা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তদন্তের জন্য যে উচ্চ পর্যায়ের কমিশন তৈরি করছেন। তাঁদের কাছে অর্থ লগ্নিকারী এইসব সংস্থার তালিকা দেওয়া হবে
এ দিকে শহরের একের পর এক অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসে তৈরিতে রাশ টানার উদ্যোগ নিয়েছে জলপাইগুড়ি পুরসভা। শহরের ৩২টি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসকে চিহ্নিত করেছে পুরসভা। অফিসগুলি যে নামে রয়েছে সেই নামের বদলে অন্য নামে পুরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এই সংস্থাগুলির ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনও সংস্থা ট্রেড লাইসেন্স নবিকরণ করতে চাইল তাদের প্রশাসনের থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আসতে হবে বলে পুরসবা জানিয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “মাসখানেক আগেই আমরা কোনও অর্থলগ্নি সংস্থাকে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে শহরে থাকা ৩২টি অর্থলগ্নি সংস্থা অন্য নামে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে” জলপাইগুড়ি জেলার নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “সরকারকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।” |
রায়গঞ্জেও বিক্ষোভ মিছিল করে কংগ্রেস। |
পাশাপশি, গত দু দিন ধরে বন্ধ রয়েছে জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার একটি অর্থলগ্নি গোষ্ঠীর অফিস। জলপাইগুড়ি শহরেই সংস্থার প্রায় ৩০০ এজেন্ট রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওই সংস্থার অফিসের সামনে ভিড় করে বিক্ষোভও দেখায় কিছু আমানতকারী. তবে সংস্থা সূত্রে এজেন্টদের জানানো হয়েছে, সংস্থার কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সমস্যা হওয়ায় দফতর বন্ধ রয়েছে. আগামী সপ্তাহে ফের দফতর খুলবে। জলপাইগুড়ির উকিলপাড়ায় একটি সংস্থায় বিক্ষোভ দেখান এজেন্ট, আমানতকারীরা।
আলিপুরদুয়ারে মাধব মোড় এলাকায় একটি বেসরকারি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসের সামনেও জড়ো হন মানুষ। রাজু বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বকর্মারা জানান, সংস্থায় একজন ৫ হাজার টাকা রেখেছিলেন। আলিপুরদুয়ার চৌপথী এলাকায় একটি সংস্থার অফিসে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও নোটিশ ঝোলানো হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের এজেন্টদের সংস্থা প্রাপ্য অর্থ আদায় সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক অসিত সরকার জানান, অবিলম্বে ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নিকারী সংস্থা গুলির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যুব কংগ্রেসের কোচবিহারের সভাপতি রাকেশ চৌধুরীর অভিযোগ, পুরসভার ট্রেড লাইসেন্সের সুযোগ নিয়েই কিছু সংস্থা অফিস খুলে জেলা জুড়ে কারবার চালাতে পেরেছে। গোটা ঘটনা জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান হয়েছে। সেই সঙ্গে উধাও হয়ে যাওয়া একটি সংস্থার কেনা জমিতে দলীয় পতাকা পুঁতে দেয় যুব কংগ্রেস। মদনমোহন বাড়ির কাছের ওই জমি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর দাবি তুলেছে যুব কংগ্রেস।
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা বীরেন কুন্ডু বলেন, “আমরা কোন অর্থ লগ্নি সংস্থাকে ট্রেড লাইসেন্স দিইনি। প্রমোটারি ব্যবসা সহ অন্য ব্যবসার আবেদন খতিয়ে দেখে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। তার পরেও তা দেখিয়ে কেউ অর্থ লগ্নির কারবার চালালে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।” ওই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের আমিনা আহমেদ বলেন অর্থ লগ্নি সংস্থার নামে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
|
মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |