সারদা-কাণ্ডের ছায়া পড়তে শুরু করেছে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা অন্য ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলিতে। কোথাও জমানো টাকা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে এজেন্টকে ঘিরে আমানতকারীরা টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছেন। কোথাও আবার এজেন্টরা সংস্থাগুলির অফিসে গিয়ে কর্মীদের কাছে জানতে চাইছেন, কোম্পানি হঠাৎ পাততাড়ি গোটাবে না তো? সংশয় আর ভয়ের সুতোয় বাঁধা পড়ে গিয়েছেন আমানতকারী, এজেন্ট থেকে কর্মীরা। |
পুরুলিয়া শহরের মুন্সেফডাঙায় সারদা গোষ্ঠীর অফিস ছিল। সম্প্রতি কিছু যুবক ওই ভাড়া বাড়ির দেওয়াল থেকে সারদা গোষ্ঠীর নাম লেখা বোর্ড খুলে দেন। সারদার এক এজেন্টকেও কিছু আমানতকারী লগ্নি করা টাকা চেয়ে চেপে ধরেন। দু’পক্ষ শেষে পুরুলিয়া সদর থানায় মীমাংসা করতে যান। এ রকম বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের অঘটন ঘটেনি। তবে চাপা উদ্বেগে রয়েছেন ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির এজেন্ট থেকে আমানতকারীরা। পুরুলিয়া ২ ব্লকের কুস্তাউর গ্রামের বাসিন্দা একটি সংস্থার এজেন্ট মদনচন্দ্র মাহাতো, অন্য সংস্থার এজেন্ট পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা তীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমানতকারীদের এখন একটাই প্রশ্ন, তাঁদের টাকা সুরক্ষিত রয়েছে তো? জবাব দিতে দিতে জেরবার হয়ে যাচ্ছি।” পুরুলিয়া শহরের এজেন্ট মৃত্যুঞ্জয় পাল, আড়শার তরণী গরাইরা বলেন, “চারপাশে যা চলছে, আতঙ্কে দৈনিক আমানতকারীরা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।”
শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সংস্থাগুলির ব্যবসা বেশি। হুড়া ব্লকে ২৪টি ভূঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা টাকা তুলছে বলে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার হুড়ার বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেয় কংগ্রেস। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সুব্রত মাহাতোর দাবি, “ওই সংস্থাগুলির বৈধতা ও লগ্নিকারীদের স্বার্থ কতটা সুরক্ষিত তা প্রশাসনকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি।” হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত বলেন, “এসডিও-র কাছে এ পরামর্শ চেয়েছি।” পুরুলিয়া ২ ব্লকের তপন মাজি নামে এক আমানতকারীর কথায়, “গ্রামে বিভিন্ন খেলাধুলোর প্রতিযোগিতা থেকে পুজো, মেলা স্পনসর করছে ওই সংস্থাগুলি। ওই সংস্থার লোকেদের সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিচিতি দেখে আমরা টাকা রেখেছি। এখন ওই টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে।” একটি ভুঁইফোঁড় সংস্থায় ৭৪ হাজার টাকা আমানত করেছেন হুড়ার বঙ্কিম কর। মঙ্গলবার তিনি স্থানীয় লালপুরে ওই সংস্থার অফিসে গিয়ে টাকা দাবি করেন। অফিসের ম্যানেজার বিজয় কুমার বলেন, “অনেকেই আতঙ্কে টাকা তুলতে চাইছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।” জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, এ রকম চলতে থাকলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। তাই পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। |