জঙ্গলমহলে রাস্তা নির্মাণ
আতঙ্ক বহাল, টেন্ডার ডেকেও মিলছে না ঠিকাদার
শান্তি ফিরেছে, দাবি রাজ্য সরকারের। রাস্তা তৈরির জন্য কেন্দ্র থেকে বিপুল বরাদ্দও পড়ে আছে। কিন্তু, কাজ করবে কে? ঠিকাদারই যে মিলছে না!
এই ছবি পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের। দু’দুবার টেন্ডার ডাকার পরেও এই জেলার জঙ্গলমহলের রাস্তাগুলি তৈরি করার জন্য ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, গত ১৩ বছরে যেখানে ১০৭টি রাস্তা তৈরি করেছে জেলা পরিষদ, সেখানে শুধু গত আর্থিক বছরেই কেন্দ্র এই পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য ৫০০ কিলোমিটারের বেশি (১৪৪টি) রাস্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এত টাকার কাজ করায় ঠিকাদারদের অনাগ্রহ খুবই অস্বাভাবিকবলছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারাই। বরাদ্দ হাতে থাকলে কী হবে, রাস্তা গড়তে নেমে জেলা পরিষদের বাস্তকারেরা দেখছেন কাজে আগ্রহী ঠিকাদারই মিলছে না। জেলার ২০টি ব্লকের বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত রাস্তাগুলি গড়তে টেন্ডার ডাকার পরে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গলমহলের জন্য কোন ঠিকাদারই দর দেননি। গত জানুয়ারিতে প্রথম বার টেন্ডার ডাকার পরে মাত্র ৪৮টি রাস্তার ক্ষেত্রে ঠিকাদারেরা টেন্ডারে যোগ দিয়েছিলেন। ওই রাস্তাগুলির মধ্যে কেবল ২৭টিতে তিন জনের বেশি ঠিকাদার মিলেছে। চলতি ফেব্রুয়ারির শেষে ফের টেন্ডার ডাকা হয়। এ বার দেখা যায়, মোট ৫৬টি রাস্তার জন্য ঠিকাদার মিলেছে। তার কারণ, কয়েকটি রাস্তার ক্ষেত্রে ‘সিঙ্গল টেন্ডার’ (এক জন ঠিকাদার দর দিলেই হবে) গ্রহণ করেছে জেলা পরিষদ।
এর প্রধান কারণ অবশ্যই মাওবাদী আতঙ্ক। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ১, রঘুনাথপুর ২, কাশীপুর, মানবাজার ২, হুড়া, নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, পাড়া, পুরুলিয়া ১, পুরুলিয়া ২, বরাবাজার বা বান্দোয়ানের মতো ‘শহুরে’ ব্লকগুলিতে রাস্তা তৈরির ঠিকাদার মিললেও অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া মাওবাদী-প্রভাবিত আড়শা, বাঘমুণ্ডি, ঝালদা ১, ঝালদা ২ এবং বলরামপুরের ক্ষেত্রে কোনও ঠিকাদারই আগ্রহ দেখাননি।
এমনকী বলরামপুরে যে ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত এলাকা সরজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, সেই এলাকারর জাসুডি থেকে গোয়ালডাং পর্যন্ত রাস্তার জন্যও কোনও ঠিকাদার টেন্ডারে যোগ দেননি। ঝালদা ১ ব্লকের ১১টি রাস্তার জন্য টেন্ডার ডাকা হলেও মাত্র একটি রাস্তার জন্য আগ্রহী ঠিকাদার পাওয়া গিয়েছে। আড়শার বিডিও মাধব বিসাই বলেন, “সব ক’টি রাস্তাই গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তাগুলি হলে এলাকার মানুষজন খুবই উপকৃত হতেন। কেন যে ঠিকাদারেরা আগ্রহী হচ্ছেন না, বুঝতে পারছি না। এখন তো আর আগের মতো পরিস্থিতি নেই!”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার অনেক ঠিকাদারই অবশ্য আড়ালে কবুল করছেন, জঙ্গলমহলে কাজ করতে যেতে এখনও তাঁদের বুক কাঁপে! ২০১০ সালেই ঘাটবেড়া-কেরোয়ায় ঠিকাদারের রাস্তা তৈরির যন্ত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। রাজ্য সরকার শান্তি ফিরেছে বলে দাবি করলেও সেই অভিজ্ঞতা এখনও ঠিকাদারদের মন থেকে মুছে যায়নি। এক ঠিকাদারের কথায়, “কাজ তো আমাদের করতে হবে। আমাদের শ্রমিক-ম্যানেজাররা ওখানে থাকবে। কোনও অঘটন ঘটলে কে দায় নেবে?” জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা ঝালদার বিধায়ক নেপাল মাহাতোও বলছেন, “আগের পরিস্থিতি রয়েছে মনে করেই কোনও ঠিকাদার এ দিক মুখো হচ্ছেন না। অথচ রাস্তাগুলো তৈরি হলে এলাকার ভাল হবে।” বলরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কথায়, “ওই সব ব্লকে কাজ না করতে চাওয়ার পিছনে আতঙ্ক আংশিক কারণ তো বটেই। তবে, ঠিকাদাররাও নানা অজুহাতে কাজ করতে চান না। পঞ্চায়েত মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ফের কথা বলব।”
প্রত্যন্ত ব্লকগুলিতে রাস্তা তৈরির উপকরণ নিয়ে যাওয়ার সমস্যাও ঠিকাদারদের অনাগ্রহের একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। ‘ফেডারেশন অব এনলিস্টেড কন্ট্রাক্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া শাখার কাযর্করী সভাপতি শ্রীমন সরকার অবশ্য বলেন,“ওই সব ব্লকের অধিকাংশ ঠিকাদারের ওই কাজ করার মতো আর্থিক সামার্থ্য নেই। দুই বা তিন জন ঠিকাদারকে একত্রে কাজ করতে দিলে তাঁরা আগ্রহী হতে পারেন।”
এই অবস্থায় রাস্তার কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলা পরিষদ। এমনিতেই জুন মাস থেকে চাষের মরসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই ধরনের কাজে শ্রমিক পেতে সমস্যা হয়। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিলাসীবালা সহিস বলছেন, “আমরা জানি না নতুন করে টেন্ডার ডেকে সমস্ত রাস্তা এই অর্থবর্ষের মধ্যে তৈরি করে উঠতে পারব কি না।”
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত বাস্তুকার ষষ্ঠীচরণ গরাঁই বলেন, “তৃতীয় বার টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া চলছে। কেমন সাড়া মেলে দেখি। না হলে অন্য কোনও উপায় ভাবতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.