কেউ বলতেই পারে, এটা পুরুষতন্ত্র! কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমার স্ত্রী নাতাশার মুখে কোনও ক্রিকেটারের প্রশংসা শুনলে আমি হিংসেয় জ্বলি। আরে, আমিও তো একজন ক্রিকেটার। যে কিনা দু’টো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। পঞ্চাশের ওপর টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এবং আইপিএল চ্যাম্পিয়ন টিমের ক্যাপ্টেন। আমিও চার-ছক্কা মারতে পারি। মোটামুটি ভাল ফিল্ডার। পার্টটাইম লেগ স্পিনার। মাঠে আগ্রাসী হাবভাব নিয়ে খেলি। আর একেবারে হৃদয় থেকে একজন টিমম্যান। এত সব সত্ত্বেও আমি এখনও নাতাশার ফেভারিট ক্রিকেটার নই। সেই জায়গাটা নিয়েছে মিস্টার ক্রিস গেইল। ধুস!
এ বার আরসিবি-র বিরুদ্ধে আমাদের খেলার দিন নাতাশাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও কি এই ম্যাচেও গেইলের ঠ্যাঙানি দেখতে চায়? সে দিনও বলল, “হ্যাঁ।” তবে পাশাপাশি অবশ্য ব্যালান্সও করল। বলল, “আমি চাই গেইল ভাল খেলুক কিন্তু ম্যাচটা কেকেআর জিতুক।” সম্ভবত সেই সময় ঈশ্বর আধোঘুমে ছিলেন। কারণ নাতাশার প্রার্থনা সে দিন অর্ধেক পূরণ হয়েছিল। ধুস!
গেইল টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের মান আরও উঁচুতে তুলে দিল। মঙ্গলবার পুণে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে গেইলের ১৭৫ নট আউটের পর আরও অনেক ক্রিকেটারের বউদের ফেভারিট ক্রিকেটারের নামের লিস্টে অদলবদল ঘটবে। গেইল লোকটা আদ্যন্ত এন্টারটেনার। কলকাতার সান্ধ্য ঝড়-বৃষ্টি আমাদের প্র্যাকটিসে ব্যাঘাত ঘটানোর পর আমরা ইডেনের ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড়লাম বেঙ্গালুরুতে গেইল-ঝড় টিভিতে প্রত্যক্ষ করতে। ওহ, ওই অনবদ্য বলের লাইন বিচার! ওই সোজাসাপটা ব্যাটের সুইং! ট্রাপিজিয়ানদের মতো ক্রিজে শরীরের ব্যালেন্স! ওই চাপা ঔদ্বত্ব্য! গেইল নিজের নামটা শুধু রেকর্ড বইতেই তুলল না। নিজের জন্য একটা নতুন রেকর্ড বইয়ের সংস্করণ তৈরি করল। নাতাশা তো টুইট করেই চলেছে! ধুস! |
নাইটদের প্র্যাক্টিসে গম্ভীরের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস |
আরও একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান যিনি গত দিনদুয়েক খবরের শিরোনামে তাঁর নাম স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস। গেইলের কীর্তিকে স্যর ভিভ কী ভাবে বর্ণনা দেন আমি জানতে ভীষণ আগ্রহী। মনে আছে, একবার দিল্লি থেকে লন্ডন ফ্লাইটে আমার স্যর ভিভের সঙ্গ পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমাদের মধ্যে সেই বিমানযাত্রায় অনেক কিছু নিয়ে কথা হয়। জানতে চেয়েছিলাম, কী ভাবে তিনি মারার জন্য সঠিক বলটা বাছতেন? ওঁর উত্তর ছিল, “যখন বোলারের চোখে ভয় দেখতাম, বুঝতাম এ বার আমার সময়।” যে ব্যাখ্যা শোনার পর ওই রকম কিছু করার জন্য কেউ প্ররোচিত হবেই। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। ধুস!
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে একজন আমার কাছে জানতে চাইলেন, কলকাতা নাইট রাইডার্স টিম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মনোবিদ ডাক্তার রুডি ওয়েবস্টারের অভাববোধ করছে কি না? আমি বললাম, “না”। ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে উনিশশো ছিয়াত্তরে কাজ করা রুডি গত আইপিএলে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আর ভাল পারফরম্যান্স করার ব্যাপারে ভীতি, চাপ, প্রত্যাশা নিয়ে ছেলেদের সামনে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছিলেন। তবু কেন আমরা রুডিকে মিস করব? এই জন্য যে, আমরা শেষ দু’টো ম্যাচে হেরেছি? আমি মনে করি না, খেলাধুলোয় তৎক্ষণাৎ কোনও টোটকা কাজ দেয় বলে। নিজেদের ওপর বিশ্বাস, মনের জোর আর ভাল কিছু করার নীতি আমাদের কেকেআর ড্রেসিংরুমে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু সেগুলোর ধারাবাহিক ভাবে মাঠে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এই যা। ধুস!
গত দু’দিন ধরে টিম হোটেলে প্রচুর মিডিয়ার লোকজন দেখতে পাচ্ছি। আমি জানি, ওরা সচিন পাজি-র বুধবার চল্লিশে পা রাখা নিয়ে ‘এক্সক্লুসিভ’ জোগাড়ের চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, সচিন ওর টিমমেটদের থেকে কোন সাইজের কেক উপহার পাবে সেটা জানতে পারাটা মিডিয়ার কাছে সোনা পাওয়ার সমান। সম্পাদকেরা নির্ঘাত পুরো পাতা জুড়ে সচিনের জন্মদিনের কভারেজ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এ দিনের জন্য এটাকে একটা জাতীয় ইভেন্ট হিসেবে দেখা হয়। সচিনের ছোটবেলার ছবি থেকে শুরু করে কোটস, কলামসব আগাম তৈরি থাকে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, সেই বিরাট যজ্ঞে গেইলের ইনিংসটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করল। ধুস! |