দুঃখ কীসের, ব্যক্তিগত শৌর্যের কাছে হেরেছি
গেইলের ডিএনএ
পরীক্ষার দাবি উঠুক
রসিবি ইনিংস শেষ হওয়ার পর অশোক দিন্দা আমাদের ডাগ আউটে ফিরে এসে একটা কথাই বলল, “গেইল এ রকম পেটালে কী আর করব?” একদম ঠিক কথা। টিম ম্যানেজমেন্টের একজন হিসেবে তখন ওদের বলব কী? আমি নিজেও তো ঘোরের মধ্যে!
গেইল-সাইক্লোন থামার চার ঘণ্টা পর আনন্দবাজারের জন্য ম্যাচ রিপোর্ট লিখছি। এখনও চোখের সামনে গেইলের ইনিংসটা যেন রিউইন্ড হয়ে চলেছে! এ রকম কেউ ব্যাটিং করলে বিশ্বের কোনও বোলারের সাধ্য নেই কিছু করার। শুধু ডেলিভারিটা করা ছাড়া। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংবিশেষণটাও খুব ক্লিশে মনে হবে। কত কিছু চেষ্টা করেই তো আমাদের বোলাররা দেখল। বাউন্সার, গুডলেংথ, শর্ট অব গুডলেংথ, স্লোয়ার, লো ফুলটস, লো বাউন্সার, স্পিনসবার হদিশ সিধে স্ট্যান্ডে বা বাউন্ডারি লাইনের বাইরে। খুব কিছু খারাপ ঘটালে অনেক ক্ষেত্রে যেমন হয় না? হতভম্ব হয়ে মানুষ শেষমেশ হেসে ফেলে। আমাদের পুণে ডাগআউটের এ দিন প্রায় সেই অবস্থা হয়েছিল। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলাম, গেইল কি অন্য গ্রহের কেউ! আমি তো বলব, গেইলের ব্যাটে পুণে ওয়ারিয়র্সের হেনস্থা দেখে বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিরা ওর ডিএনএ পরীক্ষার দাবি তুললেও সেটা মনে হয় বাড়াবাড়ি কিছু হবে না।
সত্যি বলতে কী, আরসিবি-র কাছে আমরা যদি কুড়ি ওভারের ম্যাচও ১৩০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতাম কিন্তু গেইল-কাণ্ডের মতো কিছু ঘটত না, তা হলে সেই হারে দারুণ দুঃখ পেতাম। নিজেদের পরের ম্যাচগুলো নিয়ে বিরাট আশঙ্কায় থাকতাম। কিন্তু এ দিন সে রকমও কিছু হচ্ছে না। অন্তত আমার তো হচ্ছে না। কারণ আইপিএল সিক্সে ২৩ এপ্রিল, ২০১৩ একটা বিরল দিন। নজিরবিহীন। এ রকম দিন হয়তো আর কোনও দিন ক্রিকেটে আসবেই না। সে জন্য এ ভাবে দুরমুশ হয়েও আমাদের ডাগআউটে কাউকে সে ভাবে ভেঙে পড়তে দেখলাম না। বরং সবাই কমবেশি হতবাক। কারণ আমরা তো একটা প্রতিদ্বন্দ্বী টিমের কাছে দুরমুশ হইনি। দুরমুশ হয়েছি একজন ব্যক্তির অভাবনীয় ব্যক্তিগত শৌর্যের কাছে। যেটা রোজ রোজ কেন, বছরে এক বার ঘটে কি না সন্দেহ। আমি বরং অন্য ভাবে ব্যাপারটা দেখছি। আমাদের ওপর গেইল-সাইক্লোন তো আছড়ে পড়েইছে। যা দেখে এখন অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি যাদের আরসিবি ম্যাচ বাকি আছে, তাদের কাঁপুনি শুরু হলে অবাক হব না।
অনেকেরই প্রশ্ন, গেইলের যতই টেস্টে দু’টো ট্রিপল সেঞ্চুরি থাক, ও আইপিএলে নামলেই এমন অবিশ্বাস্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে কী ভাবে? বিগব্যাশ টি-টোয়েন্টিও খেলে। সেখানেও তো এমন মেজাজে ব্যাটিং করে না গেইল? আমার মতে এর পিছনে অন্যতম কারণ আরসিবি-র হোমগ্রাউন্ড। বেঙ্গালুরু শহরটার অবস্থানজনিত আবহাওয়া। চিন্নাস্বামী মাঠটা ছোট। উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য খু-উ-ব ভাল। বল তেমন কিছুই নড়াচড়া করে না। তার ওপর গেইলের ওই অমানুষিক শক্তি! প্রত্যেকটা বিগ শটের পিছনে ওই পাওয়ার! ছোট মাঠ বলে ওর মিসটাইমড্ শটও ছক্কা হয়ে যায়। তা ছাড়া বেঙ্গালুরু শহরটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খানিকটা উঁচুতে বলে আবহাওয়াটা হালকা। ব্যাটসম্যান উঁচু শট মারলে বল ইডেন বা চেন্নাইয়ের চেয়ে বেশি ‘ক্যারি’ করে মাঠের বাইরে উড়ে যায়।
ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল

রান ১৭৫
বল
৬৬
বাউন্ডারি
১৩
ওভারবাউন্ডারি
১৭
অফ সাইডে রান
৭৯
অন সাইডে
৯৬
সেঞ্চুরি
বল ৩০
বাউন্ডারি
ওভারবাউন্ডারি ১১
এমন পরিবেশে গেইলকে গুডলেংথ বল করবেন? সেখানেও ক্রিকেটদেবতা যেন অন্য কিছু ভেবে রেখেছেন। টি-টোয়েন্টিতে গুড লেংথ স্পটটা টেস্ট বা ওয়ান ডে-র চেয়ে আলাদা। শর্ট অব গুডলেংথ হল কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে আদর্শ গুডলেংথ। কিন্তু সেটা যদি অন্য ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে ‘বারো বাই বারো’ একটা স্পট হয়, তো গেইলের সামনে সেটা কমে দাঁড়ায় ‘ছয় বাই ছয়’-এ। তার চেয়ে শর্ট পড়লে গেইল বিশাল পুল মেরে দিচ্ছে বা, অসম্ভব জোরে কাট মারছে। আর তার চেয়ে বেশি ‘ফুল’ ডেলিভারি হয়ে গেলে ফ্রন্টফুটে সপাটে উড়িয়ে দিচ্ছে। মাঠের দুটো মাত্র পজিশনে গেইল বড় শট মারে না। ডিপ থার্ডম্যানে আর ফাইন লেগে। মানে আপারকাট আর প্যাডল শট মারে না। সে জন্য এমন অবিশ্বাস্য মারকুটে ব্যাটসম্যান হওয়া সত্ত্বেও গেইলের ‘পার্সেন্টেজ অব এরর’ অন্য বিগহিটারদের চেয়ে কম। মারতে গিয়ে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও তাই কম।
এমন ব্যাটসম্যান পৃথিবীতে কী করে হল সেটাই ভাবছি! ডিএনএ পরীক্ষা গেইলের হবে না তো কী!
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম: ক্রিসের মতো বিধ্বংসী একজন রেকর্ডটা কেড়ে নেওয়ায় ভাল লাগছে। প্র্যাক্টিস থেকে ফেরার সময় বাসে ক্রিসের ইনিংসটা ফলো করছিলাম। প্রথম থেকেই জানতাম আমার রেকর্ডটা ভাঙা যাবে এবং সেটা ক্রিসই ভাঙবে।
ক্রিস গেইল: জানি না কী করে ইনিংসটা খেললাম। নিজেকেই চমকে দিয়েছি। সকালে কিন্তু তেমন ব্রেকফাস্ট করিনি। একটা ওমলেট, দুটো বান কেক। আশা করি এর পরও একটু দৌড়োদৌড়ি করতে পারব, কয়েকটা ক্যাচও নিতে হবে।

টুইটারেও গেইল-ঝড়
আপনার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংস কোনটি? আজকের ক্রিস গেইলের ইনিংসটি কোন জায়গায় রাখবেন? ২০ ওভারে যদি গেইল অপরাজিত ১৭৫ করতে পারে, তা হলে ৫০ ওভারে কত করবে?
অভিনন্দন বন্ধু। এ ভাবেই আমাদের গর্বিত করে যাও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জামাইকা আর এক্সএলসিয়রকে (গেইলের স্কুল)।
জীবন মানেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আজ গেইলের ব্যাটিং দেখে মনে হল উইকেটকিপার হওয়ার সিদ্ধান্তটা আমার সঠিক ছিল।
যখন গেইল ব্যাট করে তখন ফিল্ডাররা দর্শক হয়ে যায় আর দর্শকরা ফিল্ডার।
কলকাতায় বৃষ্টি। বেঙ্গালুরুতেও বৃষ্টি, তবে সেটা ছয়ের।

গেইলের ভাঙা ৮ রেকর্ড
• আইপিএলের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি (১৭ বল)।
• টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম শতরান (৩০ বল)।
• আইপিএলের দীর্ঘতম ছয় (১১৯ মিটার)।
• আইপিএলে দেড়শো ছক্কা মারা প্রথম খেলোয়াড়।
• আইপিএলে টিমের দ্রততম একশো (৭.৫ ওভার)।
• টি টোয়েন্টিতে ব্যক্তিগত ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কা (১৭টি)।
• টি টোয়েন্টিতে সর্বাধিক রান (১৭৫ ন. আ)।
• টি টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলগত রান (২৬৩-৫)।

টেস্টে গেইল
৯৭ ম্যাচে ৬৮৩৬ রান
গড় ৪২.৪৫ সেঞ্চুরি ১৫ ট্রিপল সেঞ্চুরি ২ (৩১৭ আর ৩৩৩ রান)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.