|
|
|
|
কর্তারা বলছেন কর্মী-সঙ্কট |
টাকা পড়ে, ফল-ফুলের বাগান তৈরি থমকেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোথাও টাকা নেই। ফলে প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ছে প্রশাসন। আবার কোথাও জমা টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। খরচ করার রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এমনই একটি দফতর হল উদ্যান পালন দফতর। ২০১১-১২ আর্থিক বছর থেকে দু’টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা পড়েছি। সেই টাকা তো পড়েই রয়েছে। উল্টে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে নতুন করে যে টাকা মিলেছিল তা-ও খরচ করতে পারেনি দফতর। কেন খরচ করা যায়নি? জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক রণজয় পাত্র বলেন, “দফতরের কর্মী-সঙ্কট ও পদ্ধতি মেনে অর্থ খরচের গেরোয় সব কাজ করা যাচ্ছে না। এটা ঠিক, দফতরে অর্থ পড়ে থাকা ঠিক নয়। তবু চেষ্টা করছি, কী ভাবে আরও বেশি কাজ করা যায়।”
প্রথমেই ধরা যাক ‘ন্যাশনাল হর্টিকালচার মিশন’-এর কথা। এই প্রকল্পে ২০১১-১২ আর্থিক বছরের শেষে দেখা গিয়েছিল, ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা খরচ করা যায়নি। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে আরও প্রায় সাড়ে ৫১ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এক বছরে খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে ৩০ লক্ষ টাকা! আর্থিক বছরের শেষে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। এই প্রকল্পে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়। এই প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল, কেঁচো সার তৈরি, কুয়ো খনন, নার্সারি তৈরি-সহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। চাষিদের দিয়েই এই সব কাজ করানো হয়। আম, পেয়ারা, লেবু বা কাজু বাগান করলে ৭৫ শতাংশ টাকা ছাড় পান চাষিরা। সরকারি হিসাবে হেক্টর প্রতি আম, লেবু বা পেয়ারা বাগান করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়। যার মধ্যে সাড়ে ২২ হাজার টাকা সরকার থেকে চাষিকে দেওয়া হয়। তবে এই টাকা দেওয়া হয় তিন ধাপে, ৬০:৪০:৪০ আনুপাতিক হারে। কাজু চাষে সরকারি ভাবে হেক্টর প্রতি খরচ ধরা হয় ১৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১১ হাজার ২৫০ টাকায় সরকার বহন করে। তা-ও ওই একই অনুপাতে দেওয়া হয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ বছরেই বোঝা যায় বাগানটি ঠিক মতো হচ্ছে কিনা। তা দেখেই টাকা দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে সম্পূর্ণ খরচ হয়েছে বলতে কেবল সেমিনারের জন্য বরাদ্দ, ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। সেখানে বাগান তৈরির ১ কোটি ১৭ লক্ষের মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ১১ লক্ষ টাকা! এ ভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রে টাকা পড়ে রয়েছে। অথচ, বাগান তৈরির সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। বিশেষত, জঙ্গলমহলে সহজেই ফলের বাগান তৈরি করা সম্ভব। এতে গরিব মানুষের আয়ের নতুন পথও হত। কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতায় টাকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও তা করা যায়নি।
টাকা পড়ে রয়েছে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার ক্ষেত্রেও। ২০১১-১২ আর্থিক বছ শেষে এই প্রকল্পে টাকা পড়ে ছিল ২ কোটি সাড়ে ৬৯ লক্ষ টাকা। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে আরও ১ কোটি সাড়ে ৩৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিল জেলা। খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৬০ লক্ষ টাকা! সাড়ে ৩ কোটি টাকারও বেশি পড়ে রয়েছে! খরচ করতে না পারার জন্য দফতর প্রথমে কর্মী-সঙ্কটকেই দায়ী করছে। জেলা দফতরে আধিকারিক ও কর্মীর সংখ্যা মাত্র ৩ জন। জেলায় একমাত্র স্থায়ী আধিকারিক বলতে জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক। সহ-আধিকারিকের পদে একজনকে অস্থায়ী ভাবে নদিয়া থেকে আনা হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেও অস্থায়ী ভাবে দিঘা কাজু সেন্টার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। মহকুমায় কোনও অফিস নেই। ব্লক স্তরে এক জন করে ‘ফিল্ড স্টাফ’ থাকার কথা ছিল। বর্তমানে জেলার ২৯টি ব্লকে ১৮ জন রয়েছেন যাঁদের কাজ, সরাসরি চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রকল্পের কাজ দেখভাল করা। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই টাকা দেওয়া হত। প্রয়োজনে জেলা আধিকারিক পরিদর্শনে যেতেন। বর্তমানে কর্মী না থাকায় জেলা আধিকারিককেই সব দেখতে হয়। |
|
|
|
|
|