সারা দিন ধরে হাতির পাল তাণ্ডব চালাল কাঁকসার মোবারকগঞ্জ এলাকায়। হাতির লাথি খেয়ে জখম হলেন এক জন। নষ্ট হল বেশ কিছু আমগাছ, ধান, কুমড়ো, টম্যাটো, শসা খেত। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১৬টি হাতির ওই দলকে দামোদর পার করানোর চেষ্টা চলছে। আহতের নাম ধীরেন পাল। বাড়ি স্থানীয় আলসেপাড়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার খুব ভোরে মোবারকগঞ্জের দু’একজন মাঠে যাওয়ার পথে দেখেন, আমলাজোড়ার দিক থেকে কালো অন্ধকারের মতো কিছু এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারেন, ওটা হাতির পাল। গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের সতর্ক করার আগেই হাতির পাল চলে আসে মাঠে। ধান, কুমড়ো, টম্যাটো, শসা খেতে শুরু করে তারা। এমনকি, আমবাগানের কচি গাছও রেহাই পায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিঘের পর বিঘে জমির খেত নষ্ট করে দেয় হাতির দল। তার পর আশ্রয় নেয় মাঠের পাশের জঙ্গলে। |
ধানখেতের পাশ দিয়ে চলেছে হাতির পাল। কাঁকসার মোবারকগঞ্জ গ্রামে
মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান। |
বন দফতর সূত্রে খবর, বাঁকুড়ার সোনামুখির দিক থেকে ওই হাতির দলটি দামোদর পেরিয়ে ভোর রাতে কাঁকসার আমলাজোড়ায় ঢুকে পড়ে। এরপর মাঠভর্তি ফসলের লোভে সকালে তারা চলে আসে মোবারকগঞ্জের মাঠে। বন দফতরের বর্ধমান বিভাগের পানাগড় রেঞ্জ অফিসার কাশীনাথ দে জানান, হাতির দলটি বড়জোড়া রেঞ্জ থেকে এপারে এসেছিল। হুলা পার্টির লোকজন তাদের ফের বড়জোড়া রেঞ্জে পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “সম্ভবত রাতেই হাতিগুলিকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।”
হাতির দাপটে বিপর্যস্ত গ্রামবাসীরা। স্থানীয় চাষি গগন মণ্ডল ৬ কাঠা জমিতে শসা লাগিয়েছিলেন। সব শেষ। হরিপদ মণ্ডল প্রায় ১০ কাঠা জমিতে শসা ও কুমড়ো ফলিয়েছিলেন। হাতির পালে প্রায় সবই তছনছ হয়ে গিয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে এলাকার বাসিন্দা কুশ মণ্ডলের। কুমড়োর খেত থেকে এক বিঘা ধান জমি, সব শেষে। এমনকি, তাঁর সাধের আমবাগানের গাছগুলিও নষ্ট করে দিয়েছে হাতির দল। প্রায় সবারই ক্ষতি হয়েছে কম বেশি। একই কথা সবার মুখে, “বেশ খরচ করে ফসল ফলিয়েছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেল। সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেলে উঠে দাঁড়াতে পারব না।” |
হাতির হানায় জখম। —নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন চোখের সামনে নিজেদের পরিশ্রমের ফসল নষ্ট হতে দেখে গ্রামবাসীদের কেউ কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের অনেকেই হাতির পালকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। খবর পেয়ে আসে পুলিশ ও বন দফতরের লোকেরা। তাঁরা গ্রামবাসীদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ ও বন দফতরের লোকেদের বারণ সত্ত্বেও শোনেননি তাঁরা। দলে তিনটি খুদে হাতি ছিল। তাদের রক্ষা করতে বড় হাতিরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্রামবাসীদের তাড়া করে। আলসেপাড়ার ধীরেনবাবু লতায় পা আটকে পড়ে যান। একটি হাতি এসে তাঁকে পর পর দু’বার লাথি মারে। হাতিরা চলে যেতে তাঁকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। পুলিশের গাড়িতে করে তাঁকে প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে ওঠার ফাঁকে কাঁপতে কাঁপতে ধীরেনবাবু বলেন, “চাইলে আমাকে মেরে ফেলতে পারত ওরা। কিন্তু তা না করে আমাকে দু’বার লাথি মেরে পালায়। পেটে ও বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে।” জেলা পুলিশ সুপার এসএমএইচ মির্জা বলেন, “এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়েছে।” পরে অবশ্য ধীরেনবাবুকে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাতে তাঁকে কলকাতা পাঠানো হয়েছে। |