বেআইনি ভাবে জঙ্গলের কাঠ কেটে নেওয়া হচ্ছে মেদিনীপুর সদর ও শালবনি ব্লকের সীমান্ত এলাকায়। কিছু মানুষ জ্বালানির সংস্থান করতে বিঘের পর বিঘে জমির গাছ কেটে নিচ্ছেন। অনেকে সেই কাঠ বিক্রিও করছেন। বন দফতরের উদাসীনতার কারণেই দহ, আউসাবাঁধি, ভাতমোড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। দফতরের কর্তারা অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। মেদিনীপুর বন বিভাগের বন আধিকারিক আশিস সামন্তের বক্তব্য, “বন দফতর কিছু গাছ কেটেছিল। পড়ে থাকা কাঠ বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরাই নিচ্ছেন বলে শুনেছি। চুরির অভিযোগ পাইনি। খতিয়ে দেখা হবে।”
বন দফতরের এই ব্যাখ্যা যে ঠিক নয়, তা এলাকায় গেলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। সকাল থেকেই সাইকেল বোঝাই করে শাল, আকাশমণি, ইউক্যালিপটাসের কাঠ এলাকার বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষই কুড়ুল দিয়ে গাছ কেটে ফেলছেন। তারপর তা খণ্ড খণ্ড করে বেঁধে চাপিয়ে নিচ্ছেন সাইকেলে। কেউ নিয়ে যাচ্ছেন জ্বালানির জন্য, কেউ আবার শহর ও শহরতলির গ্রামগুলিতে সেই কাঠ নিয়ে গিয়ে বেচে রোজগার করছেন। |
পড়ে রয়েছে কাটা গাছ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
এ ভাবে গাছ কাটছেন কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আশপাশের গ্রামের মানুষ আমাদের এলাকার জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নিয়ে পালাচ্ছে। তাহলে আমরা কাটব না কেন?” এ ক্ষেত্রে বন দফতরের ভূমিকা কী? গ্রামবাসীর কথায়, “বন দফতরের লোক এলাকায় কমই আসে। আগে বন সুরক্ষা কমিটির লোকজনের জন্যই কেউ গাছ কাটার সাহস পেত না। এখন দিন পাল্টেছে। কেউ কাউকে মানে না।”
জানা গিয়েছে, আগে এই কমিটির মাথায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রায় সকলেই ছিলেন সিপিএম-ঘনিষ্ঠ। রাজ্যে শাসক বদলের পর তাঁরা নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “বন দফতর ছাড়াও আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বলব এ বিষয়ে নজর রাখতে। এলাকার মানুষের স্বার্থে গাছ চুরি বন্ধ করতে হবে।”
জঙ্গল বাঁচাতেই যৌথ বন সুরক্ষা কমিটি তৈরির করেছিল সরকার। বন দফতর গাছ লাগাবে। গাছ লাগানোর কাজ পাবেন এলাকার মানুষ। গাছের দেখভালও করবেন তাঁরাই। বিনিময়ে গাছ বিক্রির ২৫ শতাংশ অর্থ পাবে বন সুরক্ষা কমিটি। কমিটিতে গ্রামের সবাই থাকবেন। জ্বালানির জন্য বা বাড়ির অন্য প্রয়োজনে বাজারের থেকে কম দামে কাঠও পাবেন তাঁরা। এতে এলাকার মানুষের চাহিদা যেমন মিটবে, পরিবেশও রক্ষা পাবে। এই ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বেআইনি গাছ কাটায় দাঁড়ি পড়ছে না, বিষয়টি ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলকেই। |