মাঝরাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক মহিলার উপরে নির্যাতন চালাল সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, বছর চল্লিশের ওই মহিলার জামা-কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির পরে তাঁকে বাইরে এনে রড দিয়ে মেরে মাথা ও মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। আরও অভিযোগ, মহিলাকে বাঁচাতে এসে আক্রান্ত হন পড়শি এক যুবক ও তাঁর বোন। যুবকটির মাথায় ধারালো অস্ত্রে আঘাত করা হয়। তাঁর বোনেরও শ্লীলতাহানি করা হয়। প্রায় আধ ঘণ্টা তাণ্ডবের পরে স্থানীয়েরা দল বেঁধে বেরিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা পালায়। পরে দু’জন গ্রেফতার হয়।
সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ হাওড়া থানা থেকে হাঁটা পথে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে ঘোলাডাঙার রাধামাধব ঘোষ লেনের ঘটনা। পুলিশ সূত্রে খবর, আক্রান্ত মহিলার নাম ছবি দাস। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি জেলা হাসপাতালে ভর্তি। আহত পড়শি বাবু বিশ্বাসকে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, থানার খুব কাছে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায় অভিযোগ পাওয়ার পরের দিন বিকেলে। |
হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছবি দাস। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বাড়ির একটি ঘরে দীর্ঘদিন ভাড়া রয়েছেন অবিবাহিতা ছবিদেবী। বছর দুই আগে বাড়ির মালিক গোপাল কাম্বলি স্থানীয় বাসিন্দা জগন্নাথ যাদবকে বাড়িটি বিক্রি করে দেন। অভিযোগ, এর পর থেকেই জগন্নাথ প্রোমোটিং করার জন্য ছবিদেবীকে উঠে যেতে চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁকে জোর করে তুলে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এর পরে ছবিদেবীর উপরে এই হামলা হয়।
মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির সামনে স্থানীয়দের ভিড়। ছবিদেবীর ঘরের সামনের উঠোনে, দেওয়ালে রক্তের ছোপ। ঘরের দরজা ভাঙা। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবু। তিনি বলেন, “গোলমালের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি জগন্নাথ যাদবের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১৫ জন দুষ্কৃতী রড, ভোজালি, লাঠি নিয়ে ছবিমাসিকে আক্রমণ করেছে। লাথি মেরে দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁকে মারতে মারতে টেনে বাইরে নিয়ে আসছে।”
বাবুর অভিযোগ, তিনি, তাঁর মা শ্যামা বিশ্বাস এবং বোন রেখা বিশ্বাস ছবিদেবীকে বাঁচাতে গেলে দুষ্কৃতীরা রড দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। রেখার শ্লীলতাহানি করা হয়। শ্যামাদেবীকেও ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। তিন জনকে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে শিকল দিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত কিছুর পরেও পাঁচ মিনিট দূরত্বের থানা থেকে পুলিশ আসেনি। ওই রাতে থানায় গিয়ে দেখা যায় জগন্নাথ ও তাঁর সহযোগী সুভাষ যাদব বসে রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরে অবশ্য পুলিশ তাঁদের আটক করে। লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ কেন সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গেল না, তা দেখা হচ্ছে।” |