সারদার বিরুদ্ধে অসম জুড়ে বিক্ষোভ
মা রাখা টাকা লোপাট হতে চলেছে বুঝতে পারার পর, আজ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সারদার দফতরগুলিতে হামলা শুরু হয়েছে। সারদার মালিক সুদীপ্ত সেনের গ্রেফতার হওয়ার খবর মেলার পর বিক্ষোভ আরও বাড়ে। সারদা গোষ্ঠীর গুয়াহাটির দু’টি সংবাদপত্রের দফতর, ধুবুরির বিস্কুট কারখানা ও সারদা অ্যাগ্রোর দফতরগুলি বন্ধ। পাওনাদার, এজেন্ট, আমানতকারীরা দফতরগুলির সামনে দিনভর বিক্ষোভ দেখান। অন্য দিকে, সারদা প্রকাশনার অসমের ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক দিবন ডেকা আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “রাজ্যের স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, প্রাক্তন ডিজি শঙ্করপ্রসাদ বরুয়া প্রমুখের প্রত্যক্ষ মদতেই অসমে সারদা গোষ্ঠীর প্রতিপত্তি বাড়ে।”
জানুয়ারি মাস থেকেই চলছিল টালবাহানা। টাকা ফেরত পাওয়ার আশ্বাসে আস্থা রেখে এত দিন পর্যন্ত চুপ ছিলেন দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত আমানতকারীরা। কিন্তু সারদার প্রতারণা সামনে আসার পরে, গত কাল বঙাইগাঁওয়ে সারদা গোষ্ঠীর দফতরে হামলা চলে। হামলার খবর এসেছে শিলচর, কোকরাঝাড় থেকেও। বঙাইগাঁওতে সারদার দফতরটি চালাতেন বিপ্লব দত্ত নামে এক ব্যক্তি। তিনি কংগ্রেস বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব চন্দন সরকারের আত্মীয়। অফিসের সামনে রাখা সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল্স-এর একটি বাসে আগুন লাগানো হয়। তবে পুলিশ অফিস ভাঙচুর ঠেকিয়েছে। একই অবস্থা গুয়াহাটিতেও। গুয়াহাটির জু রোড দফতরে রাতেই হামলা হয়। আজ লাল গণেশ এলাকায় সারদার বন্ধ দফতরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বহু মহিলা। অনেকেই বহু কষ্টে সঞ্চয় করা ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন এজেন্টদের হাতে। আজ এজেন্টদেরও দেখা মিলছে না। কর্মীরা বহুদিন থেকেই উধাও। এজেন্টদের সিংহভাগই হামলার ভয়ে ঘর ছাড়া। তাঁদের পরিবারে আশঙ্কা, টাকা না মেলায় আমানতকারীরা বাড়িতে চড়াও হতে পারে। এ দিকে, ধুবুরির বন্ধ বিস্কুট কারখানার সামনে ভিড় করেন পাওনাদাররা। রাজ্যে সারদার দফতরগুলি পুলিশ সিল করে দিয়েছে। সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার খবরে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় রাজ্যের সব জেলায় পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ দিকে, সারদা গোষ্ঠীর বাংলা ও ইংরাজি সংবাদপত্র দু’টির কর্মীরা পল্টনবাজার এবং দিসপুর থানায় ইতিমধ্যেই মালিকের নামে মামলা করেছেন। সংবাদপত্র দু’টি ১ এপ্রিল থেকেই বন্ধ। ১২ এপ্রিল, সুদীপ্ত সেন সংবাদপত্র কর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেতন মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সকালবেলার কার্যনির্বাহী সম্পাদক অমল গুপ্ত জানান, ১৩ এপ্রিল, শতাধিক কর্মীর বেতন বাবাদ, আমার ও স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে কলকাতার অফিস থেকে ২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়। সকলের মধ্যে সেই টাকা ভাগ করা হলেও, তিন মাসের বেতনের তুলনায় সেই পরিমাণ নগন্য। এরপর, গুয়াহাটি ও শিলচরের কর্মীরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করা হয় প্রকাশক দিবন ডেকা ও তাঁর স্ত্রী তথা অসমে সারদা প্রকাশনার অধিকর্তা বিভারানি কলিতার নামেও। কিন্তু, দিবন ও বিভারানি পুলিশকে জানান, তাঁরা মালিকপক্ষের কেউ নন, বেতনভুক কর্মী। তাই, জিজ্ঞাসাবাদের পরে, পুলিশ দিবনবাবুকে ছেড়ে দেয়। এতে কর্মীদের ক্ষোভ বাড়ে। অভিযোগকারীদের পক্ষে শম্ভু মজুমদার জানান, কলকাতায় মনোজকুমার নেগেলকে যদি গ্রেফতার করা যেতে পারে, তবে, দিবন ও তাঁর স্ত্রী কেন ছাড়া পাবেন? সারদার শিলচর অফিসের কর্মীদের অনেকে অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষের তরফে, মামলা প্রত্যাহার করার জন্য ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ দিকে দিবন ডেকা আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে সারদার কর্তা সুদীপ ঘোষদস্তিদারের সঙ্গে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, প্রকাশনা পরিষদের সদানন্দ গগৈ ও প্রাক্তন ডিজি শঙ্করপ্রসাদ বরুয়ার কথোপকথনের কললিস্ট প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম মন্ত্রী, ডিজিরা যে সংস্থার পৃষ্ঠপোষক তাদের ভরসা করা যায়। আমি নিজে একদিন রাত ১টা নাগাদ সুদীপ্ত সেনকে নিয়ে টাউন হলে হিমন্তর কাছে গিয়েছি। ঘণ্টাখানেক পরে, বৈঠক সেরে বের হয়ে সুদীপ্তবাবু বলেন, সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আপনারা কাজ চালিয়ে যান।”
এই সুদীপ্ত সেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জানুয়ারি মাসেই রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী জানান, “তখন সারদা গোষ্ঠীর তরফে কর্ণধারের নিরাপত্তা চেয়ে আর্জি জানানো হয়। তাই জানুয়ারিতে তার ব্যবস্থা করতে আইজি(আইন-শৃঙ্খলা)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।” কামরূপ মহানগরের এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি বলেন, “গুয়াহাটির দফতরগুলিতে থাকা কম্পিউটারে সংস্থার বহু তথ্য থাকতে পারে। তাই দফতরগুলিকে হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য সিল করে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে, গৌহাটি হাইকোর্টে সারদা গোষ্ঠী-সহ সব চিটফান্ডের বিরুদ্ধে জনস্বার্থের মামলা করেছেন তথ্য অধিকার কর্মী অখিল গগৈ। আজ সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মন্ত্রী-পুলিশকর্তাদের নাম জড়ানোর পরে গগৈ চিটফান্ডগুলির সঙ্গে মন্ত্রী, আমলা, পুলিশের যোগসাজশ নিয়ে নিরপেক্ষ সিবিআই তদন্ত দাবি করেন। তাঁর আবেদন, আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষার্থে মামলাটির শুনানি ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে করা হোক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.