উপগ্রহ থেকে তোলা ছবির সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গের জলাধারগুলির মানচিত্র তৈরি করল রাজ্য মৎস্য দফতর। সমীক্ষার মাধ্যমে তার মালিকানাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এত দিন এ সংক্রান্ত কোনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছিল না রাজ্য সরকারের কাছে। এর জেরে, মৎস্য চাষের পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এ বার সেই সমস্যা মিটবে বলে আশা মৎস্য দফতরের।
প্রশাসন ও মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, গোটা রাজ্যে ফিসারি রিসোর্স ম্যাপিং প্রজেক্টের (উপগ্রহ চিত্র) মাধ্যমে জলাশয় চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই মৎস্য দফতরের পশ্চিমাঞ্চল শাখা (দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া) জেলার সমস্ত জলাশয় চিহ্নিত করে মাপ অনুসারে সেগুলির শ্রেণি নির্দিষ্ট করেছে। তারপর পঞ্চায়েতগুলিতে চুক্তিভিত্তিক সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হয়। তাঁরা ম্যাপ নিয়ে গ্রামে ঘুরে খাস ও সরকারি জলাশয়গুলি চিহ্নিত করে জলাশয়ের পরিমাণ, প্লট নম্বর ও মালিক (পূর্ত দফতরের না সেচ দফতরের না অন্য কোনও সরকারি দফতরের) ঠিক করে প্রশাসনের কাছে জমা দেন। সেই সমীক্ষা হাতে পেয়ে মৎস্য দফতর সমস্ত কাজ পরিচালনায় পাঁচ জনের একটি কমিটি গড়ে। কমিটিতে রয়েছেন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক-সহ মৎস্য অধিকর্তা, এআরসিএস ও জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (এডিএম, এলআর)। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানিয়েছেন, “১৬টি জেলায় এই কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দু’টি জেলায় কাজ চলছে।” |
উপ মৎস্য অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উৎপল সর জানিয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬৩টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ২৩টি, বাঁকুড়ায় ৭১টি ও পুরুলিয়ায় ৭৪টি ২০ একর ও তার চেয়ে বড় মাপের জলাশয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
কিন্তু, এর পর কী হবে?
উপ মৎস্য অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উৎপল সর জানান, “তিনটি শ্রেণিতে সরকারি জলাশয়গুলি বণ্টন করা হবে। সেগুলিতে মাছ চাষের সুযোগ পাবে টেন্ডারে নির্বাচিত সমবায় বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। প্রথমে ২০ একর বা তার অধিক, দ্বিতীয় ধাপে ১০-২০ একর এবং তৃতীয় ধাপে ৫-১০ একরের জলাশয় ও ছোট পুকুরগুলিকে চাষের জন্য লিজ দেওয়া হবে।” তাঁর আশা, চলতি মাসেই জলাশয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে দেওয়া যাবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তও বলেন, “দ্রুত যাতে প্রথম পর্যায়ে বাছাই করা জলাশয়গুলি টেন্ডার ডেকে বিলি করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনই খানিকটা সুরাহা হবে সেচের। দুই মেদিনীপুর জেলার সেচ দফতরের অধীক্ষক সুবীর লাহা বলেন, “এই ব্যবস্থা চালু হলে সেচের সমস্যা কিছুটা হলেও মিটবে।”
উপ মৎস্য আধিকর্তা উৎপল সরও বলেন, “যে সমস্ত জায়গায় জমির কাছাকাছি পুকুর আছে, সেখানে মাছ চাষ হলে প্রয়োজনে কৃষকেরা সেই পুকুর থেকে জল নিয়ে চাষও করতে পারবেন।”
|
রাজ্যে মাছ চাষ |
মোট উৎপাদন |
১৪.৪০ মেট্রিক টন (চাহিদার তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ কম) |
মাছ চাষ হয় |
৩.৩১ লক্ষ হেক্টর জলে |
অব্যবহৃত |
১.৯১ লক্ষ হেক্টর জল |
মাছ চাষে যুক্ত |
প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ |
বিদেশি মুদ্রা বাবদ আয় |
বছরে ৭৫০ কোটি টাকা (মূলত চিংড়ি রফতানিতে) |
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র |
৪টি (কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে) |
|