তাঁর বৈঠক মানেই মাঝরাত। কিন্তু অত রাতে বহু মানুষ এক জায়গায় মিলিত হলে পুলিশ সন্দেহ করতে পারে। নানা প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়। তাই বেশি রাতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী আনতে ভরসা ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। আর ছিল ‘কেপি’ লেখা মোটরবাইক। ‘কেপি’ মানে, কলকাতা পুলিশ।
বছর কয়েক আগে একটি স্বাস্থ্য শিবিরে কলকাতা পুলিশের হাতে সারদা-র তরফেই তুলে দেওয়া হয়েছিল ওই মোটরবাইক। তারই কয়েকটা সারদা-কর্তারা রেখেছিলেন নিজেদের হেফাজতে। পুলিশের চোখ এড়িয়ে রাতে কর্মী আনার কাজে ওই মোটরবাইকগুলিই ব্যবহার করা হত। সারদা মামলায় ধৃত সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর, মনোজ নাগেলকে জেরা করে পুলিশ এই তথ্য জেনেছে।
মঙ্গলবার কাশ্মীরে সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ার অনেক আগেই নাগেল পুলিশকে জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট অফিসের পাশে সল্টলেক স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি হোটেলে সংস্থার সমস্ত কর্মীকে বৈঠকে ডেকেছিলেন সুদীপ্ত সেন। রাত দেড়টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত বৈঠক চলে। অত রাতে কয়েকশো কর্মীকে হোটেলে পৌঁছতে অ্যাম্বুল্যান্স ও ‘কেপি’ লেখা গাড়িই ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই বৈঠকেই ‘সুদীপ্ত স্যার’ জানিয়েছিলেন, মিডিয়া ব্যবসায় লাভ না হওয়ায় তা বন্ধ
করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু অন্য ব্যবসা নিয়ে কোনও খারাপ
খবর শোনাননি। |
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “এখনও অবধি যে ২২টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে দু’টি সুদীপ্তর নিজের। বাকি গাড়ির মালিকদের কাগজপত্র নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। সুদীপ্ত সেনের সম্পত্তির যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তার অধিকাংশই
ভাড়ায় নেওয়া।”
পুলিশি তদন্তে সারদা গোষ্ঠীর কর্তাদের নামের যে তালিকা মিলেছে, তা-ও ভুয়ো বলে দাবি করেছে পুলিশই। তদন্তে তারা জেনেছে, ডিরেক্টর হিসাবে তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ আসলে সংস্থারই সাধারণ কর্মী। যেমন হেমন্ত প্রধান নামে এক অধিকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে,
তিনি সুদীপ্তবাবুর পাচক ছিলেন। নাগেল যে সব নাম পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা দু’মাস আগে কাজে বহাল ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বিধানগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “ওই কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরের বাকি সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
ইতিমধ্যে লেকটাউন এলাকার কয়েকটি ব্যাঙ্কে হানা দিয়ে সুদীপ্ত সেনের সাতটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে বিধাননগরের পুলিশ। তাদের দাবি, সব ক’টি অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা রেখেছিলেন সারদা-মালিক। তাদের দাবি, আগে বাজেয়াপ্ত করা কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই এক লক্ষ টাকার বেশি অর্থ ছিল না। এই প্রথম দেখা গেল, লেকটাউন এলাকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে ৫০ কোটি টাকা করে রেখেছিলেন সুদীপ্ত। |