গ্রামে সেচের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় তৈরি হয়েছিল নদীসেচ প্রকল্প। নদীর পাশে গড়ে উঠেছিল পাম্প হাউস। কিন্তু সেই ঘরে ফাটল ধরায় দুষ্কৃতীরা কয়েক বার পাম্পের যন্ত্রাংশ চুরি করতে হানা দেয়। আর তাতেই ভয় পেয়ে পাম্প সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বাসিন্দারা। ফলে, চাষের কাজে এখন সেচের জল পেতে তাঁরা অসুবিধায় পড়ছেন বলে অভিযোগ চাষিদের। ঘরটি সংস্কারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বুদবুদে দেবশালা পঞ্চায়েতে মৌকোটা গ্রামের চাষিরা।
বাসিন্দারা জানান, মৌকোটা গ্রামে উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থা ছিল না। চাষে সুবিধার জন্য কয়েক বছর আগে কুনুর নদীর উপরে ভরসা করে তৈরি হয়েছিল একটি নদী সেচ প্রকল্প। নদীর পাশেই গড়া হয়েছিল পাম্পহাউস। গ্রামেরই কয়েক জন সেই ঘর পাহারা দিতেন। চাষের সময়ে পাম্প চালানো ও দেখাশোনা তাঁরাই করতেন। পাম্পহাউস লাগোয়া একটি ঘরও তৈরি হয়েছিল তাঁদের জন্য। এই সেচ প্রকল্প দেখভালের জন্য গ্রামে একটি কমিটিও গড়া হয়। সেটির সম্পাদক নির্মল মণ্ডল জানান, বছর চারেক আগে পাম্পহাউসের ঘরে ফাটল ধরতে শুরু করে। গত বছর বর্ষার পরে তাঁদের জন্য তৈরি ঘরেও পাহারাদারদের পক্ষে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। |
মৌকোটা গ্রামে বেহাল পড়ে পাম্পের ঘর। —নিজস্ব চিত্র। |
নির্মলবাবু অভিযোগ করেন, ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর কয়েক জন দুষ্কৃতী পাম্পের মোটর চুরি করতে আসে। কিন্তু পাহারাদার ও গ্রামবাসীদের তৎপরতায় সে যাত্রায় দুষ্কৃতীরা সফল হয়নি। কিন্তু পাম্পহাউসের ঘরটিও বিপজ্জনক হয়ে পড়ায় পাহারাদারেরা আর সেখানে থাকতে পারেননি। নির্মলবাবু বলেন, “গত বছর বর্ষার সময় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা পাইপগুলি চোরেরা চুরি করে নিয়ে পালায়। তাই আর পাম্পটি চালু করা সম্ভব হয়নি।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর পরে আর ওই ঘরে পাম্পের অন্য সব যন্ত্রাংশ রাখার ঝুঁকি নেওয়া যায়নি। সেগুলি খুলে নিজেদের হেফাজতে রেখেছেন তাঁরা।
নির্মলবাবুর দাবি, এ বছর জল না মেলায় এলাকার প্রায় ৮০ একর জমিতে বোরো চাষ হয়নি। এলাকার এক চাষি মানিক ঘোষ বলেন, “এই নদী সেচ প্রকল্পের উপরে ভরসা করেই আমাদের চাষাবাদ হয়। বর্ষার সময়ে বৃষ্টি কম হলেও এই পাম্পের সাহায্যে বৃষ্টির ঘাটতি মেটানো যায়। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই।” তাঁদের অভিযোগ, বারবার বিডিও-র কাছে জানিয়েও ঘর সংস্কারের আবেদন জানানো হলেও ফল হয়নি।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাম্পহাউসের ঘরের দেওয়াল প্রায় দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। জানালা, দরজা নেই। ঘরের একটা অংশ আবার মাটিতে বসে গিয়েছে। অনেক ইটও খুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই পাম্পহাউসের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষ, বিমলচন্দ্র ঘোষেরা। তাঁরা বলেন, “ঘরটি যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। তাই এখানে থাকা সম্ভব নয়।” তাঁরা জানান, ঘরটি সংস্কার করা হলে আবার পাহারা দিতে তাঁরা রাজি।
পাম্পহাউস সারানোর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আউশগ্রাম ২ বিডিও সনাতন সেন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। |