রাজ্যে ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থার রমরমা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে কংগ্রেসের আইন অমান্য কর্মসূচিতে জেরবার হল আসানসোল শহর। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ কয়েক হাজার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক আসানসোল আদালত চত্বরে জড়ো হন। ঘণ্টা দুয়েকের এই কর্মসূচিতে শহরে রীতিমতো যানজট হয়। আইন অমান্য শেষ হওয়ার পরেও জনজীবন স্বাভাবিক হতে বেশ কিছু ক্ষণ সময় লাগে।
সম্প্রতি আসানসোলে কংগ্রেসের নানা কর্মসূচিতে এত কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। মাস তিনেক আগে আসানসোলের গির্জা মোড়ে দলের প্রদেশ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে আয়োজিত একটি সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি খানিকটা চোখে পড়েছিল। তবে এ দিন দুপুরে রোদ-গরম উপেক্ষা করে যত লোক আইন অমান্যে এসেছিলেন, সে দিন তা চোখে পড়েনি। এ দিনের কর্মসূচির পরে স্বভাবতই খুশি আসানসোলের কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের অনেকেরই দাবি, সারদা-কাণ্ড ও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভই এই কর্মসূচিকে সফল করেছে। |
আদালত চত্বরে চলছে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
আর বছরখানেক পরেই আসানসোল পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। বর্তমানে পুরসভার ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট। কিন্তু আগামী পুরভোটে সেই জোট থাকবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। শেষ পর্যন্ত যদি জোট না হয়, সেক্ষেত্রে পুরভোটে কংগ্রেসকে সম্মানজনক ফল করতে হলে কঠিন লড়াই করতে হবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। দলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করে দলের সদস্য-সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখাই এখন প্রধান কাজ। মঙ্গলবার তারই প্রাথমিক প্রস্তুতি দেখা গিয়েছে। দলের জেলা সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, “আমাদের কর্মীরা বুঝেছেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধ করতে হবে। তাই আজকের কর্মসূচিতে সবাই ঝাপিয়ে পড়েছেন।”
এ দিন কংগ্রেসের আসানসোল ব্লক সভাপতি আকাশ মুখোপাধ্যায় ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থা নিয়ে শহরের তৃণমূল নেতাদের আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, “এখানকার অনেক তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলরই ওই ধরনের সংস্থা চালাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।” ওই নেতা-কাউন্সিলরদের নাম জানাতে না চাইলেও তাঁর দাবি, যাঁদের সম্বন্ধে তিনি এই অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের ভাল ভাবেই চেনেন। যদি ওই কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা না নেয় তা হলে প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ-সহ অভিযোগ জানাবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। |
ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থার রমরমার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ দেখাল কংগ্রেস। |
মঙ্গলবার কংগ্রেসের এই বড় জমায়েতের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। তবে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার কারবারে তাঁর দলের কাউন্সিলরদের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে অপূর্ববাবু বলেন, “তথ্য ও প্রমাণ-সহ ওঁরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করুন। তার পরেই বোঝা যাবে, এই অভিযোগ কতটা ঠিক।” তিনি আরও জানান, দলের উচ্চ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের নেতা-কর্মী কেউ এই অর্থলগ্নি সংক্রান্ত কোনও অপরাধে জড়িত থাকলে দল ব্যবস্থা নেবে। এই শিল্পাঞ্চলের নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রেও সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলা হবে বলে অপূর্ববাবুর আশ্বাস। |