সারদা-কাণ্ডের জের বাঁকুড়ায়
মেয়াদের আগেই টাকা তোলার হিড়িক
সারদা-কাণ্ডের পরে বাঁকুড়া জেলায় অন্যান্য ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নী সংস্থার আমানতকারী ও এজেন্টদের মধ্যেও ভয় ছড়িয়েছে। সোমবারই গঙ্গাজলঘাটির একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নী সংস্থায় কয়েকশো আমানতকারী গিয়ে অবিলম্বে তাঁদের জমা করা টাকা চেয়ে বিক্ষোভ দেখান। শেষে পুলিশ গিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেন।
সারদা-কাণ্ডের জেরে বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নী সংস্থায় টাকা লগ্নী করা মানুষজনের অনেকেরই বিশ্বাসের জায়গাটা টলে গিয়েছে। তাঁরা এখন জমানো টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। যোগাযোগ করছেন এজেন্টদের সঙ্গে, দৌড়ে যাচ্ছেন সংস্থাগুলির অফিসে। দিশাহারা এজেন্টরাও। আমানতকারীদের ভরসা অটুট রাখতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে গিয়েছেন সংস্থাগুলির কর্মী ও কর্মকর্তারাও। সোমবার দুপুরে গঙ্গাজলঘাটির একটি ভুঁইফোড় সংস্থায় প্রায় ৩০০ জন আমানতকারী গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অনেকেই ছিলেন, যাঁরা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জমানো টাকা তুলতে চাইছিলেন। গঙ্গাজলঘাটির ওই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নী সংস্থার শাখা ম্যানেজার জন্মেজয় ঘোড়াই বলেন, “আমানতকারীরা টাকা তুলতে চাইছেন। কিন্তু আমাদের সংস্থায় যখন তখন টাকা তোলার নিয়ম নেই। তবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই কী ভাবে টাকা ফেরত দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেন।” তবে গঙ্গাজলঘাটির ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ওই অর্থলগ্নী সংস্থার বাঁকুড়া শাখার ম্যানেজার অশোক পালের অভিজ্ঞতা, “সারদার ঘটনার পরে মানুষ আর টাকা রাখতে চাইছেন না। উল্টে লগ্নি করা টাকা এখন তাঁরা তুলে নিতে চাইছে।” তিনি জানান, মেয়াদের আগেই কী ভাবে এই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আজ মঙ্গলবার মেদিনীপুরে সংস্থার রিজিওনাল অফিসে কর্মকর্তাদের বৈঠকে বসার কথা।
ওই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নী সংস্থায় আমানত করেছেন গঙ্গাজলঘাটির লটিয়াবনির বাসিন্দা গৌতম হাজরা। তাঁর দাবি, “সারদায় ১৫ হাজার টাকা লগ্নি করেছিলাম। সেই টাকা পাব কি না জানি না। এই সংস্থাতেও ১০ হাজার টাকা লগ্নি করেছি। তাই আর দেরি না করে টাকা তুলে নিতে চাইছি।” অন্য দুই আমানতকারী গঙ্গাজলঘাটির রাধামাধবপুরের দিলীপ মহন্ত, কেশিয়াড়ার প্রতিমা মণ্ডলরাও বলেন, “এখন চারপাশে যা চলছে, তাতে যে ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি ওঠেনি, সেগুলি নিয়েও ভয় দেখা দিয়েছে। তাই সময় থাকতেই টাকা তুলে নিতে চাইছি।”
শুধু আমানতকারীরাই নয়, ভুঁইফোড় সংস্থাগুলির কর্মী, এজেন্টজের মনেও সংশয় দানা বেঁধেছে। বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা সুশান্ত শীট, কমরারমাঠ এলাকার সোমনাথ রক্ষিতদের মতো এজেন্টরা বলছেন, “সারদার মতো ঘটনা আমাদের সংস্থায় ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। যাঁরা আমাদের হাত দিয়ে টাকা লগ্নি করেছেন, তাঁদের হাতে একবার টাকা তুলে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত হব।” আর একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নী সংস্থার এজেন্ট বাঁকুড়া শহরের জুনবেদিয়ার বাসিন্দা অনন্ত রায় বলেন, “আমাদের সংস্থায় দিব্যি কাজ চলছে। কিন্তু তা সত্বেও গ্রাহকেরা সামনে পেলেই নানা প্রশ্ন করছেন। জবাব দিতে দিতে আমরা জেরবার হয়ে যাচ্ছি।” চাপে পড়ে গিয়েছে পুলিশ প্রশাসনও। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “বাঁকুড়া জেলায় সারদার দফতর বেশি নেই, তাই ঝামেলার আশঙ্কাও কম। কিন্তু অন্য সংস্থাগুলির যথেষ্ট অফিস রয়েছে। তাই প্রতিটি থানাকে সব রকম পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.