আমনতকারীদের টাকা ফেরতের হুমকিতে সুতির খিদিরপুরে নিজের বাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেন সারদা গোষ্ঠীর এক মহিলা এজেন্ট। তাপসী সিংহ নামে ওই এজেন্ট আশঙ্কাজনক অবস্থায় জঙ্গিপুর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। তাঁর স্বামী শ্রীনন্দন সিংহও একই সংস্থার এজেন্ট। আমানতকারীদের ভয়ে কার্যত বাড়ি ছাড়া তিনি।
বছর দু’য়েক ধরে ওই দম্পতি রেকারিং ও ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে আমানতকারীদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। শ্রীন্দন বলেন, “রেকারিং ডিপোজিটে রাখা প্রায় ২ লক্ষ টাকা ম্যাচিওরিটি দেওয়ার কথা ছিল এপ্রিলে। আমানতকারীদের কিস্তি জমা দিতে ফরাক্কার অফিস গেলে কর্মীরাই জানান, ৩০ এপ্রিল সব টাকা দেওয়া হবে।” |
শ্রীনন্দন বলেন, “সংবাদপত্র থেকে কয়েকদিন ধরে জানতে পারছি সারদা গোষ্ঠীর পাততাড়ি গোটানোর কথা। ফরাক্কার অফিসে গিয়েও দেখেছি তালা ঝুলছে। অফিসের এক কর্মীকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘অফিস উঠে গিয়েছে। আমরাও তিন মাস থেকে বেতন পাইনি। তোমাদের জমানো টাকার খবর বলতে পারব না।’ এরপর আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। আমনতকারীরা বাড়ি ধর্ণা দিয়ে বসেছেন। আমি ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি বিড়ি বেঁধে কোনও রকমে সংসার চলে আমাদের। কোথা থেকে মোটাবো আমানতকারীদের ৫ লক্ষ টাকা। সংস্থায় আমারও ২০ হাজার টাকা আমানত ছিল।”
ওই অবস্থায় সোমবার ভোররাতে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন তাপসীদেবী। জঙ্গিপুর হাসপাতালে অসুস্থ তাপসী বলেন, “স্বামীকে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমিও লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। গ্রামের মানুষ বাড়ি চড়াও হয়ে রোজ গালমন্দ করছেন। টাকা না পেলে মারধর করার হুমকি দিচ্ছেন। ১০ বছরের ছেলে স্কুলে গেলে তাকেও গালমন্দ করছেন গ্রামবাসীরা। দু’ দিন ধরে আমানতকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু গ্রাহকের প্রায় সবাই গরিব বিড়ি শ্রমিক। সামান্য আয় থেকেই তাঁরা টাকা জমিয়ে ছিলেন এক সঙ্গে থোক টাকার লোভে। কত আর গঞ্জনা গালমন্দ শুনব তাঁদের । তাই ওসুধের দোকান থেকে এক গাদা ঘুমের ট্যাবলেট এনে রাতে খেয়ে ফেলেছি।”
ছাবঘাটি গ্রামের আর এক এজেন্ট সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “২০০৯ সালে আমি সারদা গোষ্ঠীতে ঢুকি। ফরাক্কা থেকে কলকাতায় একাধিকবার এজেন্টের সভায় গিয়েছি। প্রতিবারই সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে দেখেছি। বার বারই তারা বলছেন, ‘কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র চলছে আমাদের।’ সেই আশ্বাসে বিশ্বাস করেই এভাবে ঠকতে হবে ভাবতে পারিনি। আমার আমানতকারীরা প্রায় ২ লক্ষ টাকা পাবেন। সব টাকা জমা দিয়েছি সারদার ফরাক্কার অফিসে। এ মাসেই ম্যাচিওরিটি দেওয়ার কথা ছিল ৩০ এপ্রিল। তার আগেই পথে বসতে হল আমাদের। বাড়িতে থাকতে পারছি না। আমানতকারীরা ছিঁড়ে খাচ্ছে। জানি না এ ভাবে কত দিন বাড়িছাড়া হয়ে থাকতে হবে।” |