‘ছোটবাবু’র চল্লিশ নিয়ে চনমনে দাদার শহর
ইডেন থেকে দূরে সচিন মগ্ন থাকলেন মৎস্যপুরাণে
ল্লিশ ছুঁই-ছুঁই এক ব্যক্তির মোহিনী শক্তি যে আস্ত একটা ম্যাচের যুদ্ধের আবহকেও ভুলিয়ে দিতে পারে, কে জানত!
দুপুর আড়াইটে। হরভজন- রোহিত শর্মাদের সঙ্গে লাঞ্চ শেষ করে সবে বেরোচ্ছে সাড়ে পাঁচ ফুটের চেহারাটা। জনা দশেক স্কুলপড়ুয়া চোখের সামনে মহানায়ককে দেখে মোটামুটি ‘থ’। মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে এল অটোগ্রাফের খাতা, সঙ্গে অস্ফুটে অনুরোধ, “স্যর, একটা সই দেবেন প্লিজ?”
দীর্ঘ তেইশ বছরের ক্রিকেটজীবনে এমন আবদারের সামনে সচিন তেন্ডুলকর যা করে এসেছেন, সেটাই করলেন। নতুন কিছু নয়। কিন্তু পরবর্তী পনেরো মিনিটে যে ভাবে হুলস্থুল বাঁধিয়ে বসলেন, তার আগাম আন্দাজ পাওয়া যায়নি।
দিব্যি হোটেলের পুলের পাশ দিয়ে রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। যেতে-যেতে আচমকা স্থির। কী ব্যাপার? না, পুলের জলে ‘গোল্ড ফিশ’ চোখে পড়েছে এবং তাদেরও নিজের হাতে ‘লাঞ্চ’ না করিয়ে যাওয়া যাবে না!
অতএব, মাছের খাবার আনো।
শহরে পা। সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
‘লিটল মাস্টারের’ ‘মৎস্যপূরাণ’-এ মন বসেছে যখন, অগ্রাহ্য করবে সাধ্য কার? মুহূর্তে হোটেল কর্মীদের ‘পালস রেট’ আড়াই গুণ এবং এক বার নয়, দু-দু’বার খাবারের ব্যবস্থা করতে হল। এবং সচিন নিরন্তর তার ছবিও তুলে গেলেন।
এমনিতেই সচিন শহরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে শহরে আবেগের হিস্টিরিয়ার জন্ম হয়ে গিয়েছে। কারণ আর কিছুই নয়, সচিনের চল্লিশতম জন্মদিন। যা হচ্ছে সৌরভের শহরে, ইডেনে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম কেকেআর ম্যাচের দিন। আগামী বুধবার। কিন্তু তাতে শহরের থোড়াই কেয়ার। সচিন মুখ্য, তাঁর জন্মদিন মুখ্য, ম্যাচ গৌণ।
প্রমাণ চাই?
ঠিক সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার (সচিনের উচ্চতার সমান) আপাদমস্তক মিষ্টি দিয়ে তৈরি একটা ব্যাট সচিনের হাতে তুলে দিতে আজ ইডেনে আসতে চান এক ভক্ত। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে। সন্দেশ দিয়ে ঠাসা ওই ব্যাটের ভিতরে থাকবে সচিনের যাবতীয় সেঞ্চুরির খুঁটিনাটি। সিএবি তাঁর জন্য চল্লিশ পাউন্ডের কেকের অর্ডার ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছে। ম্যাচের ঠিক আগে ক্লাবহাউসের লনে সেই অতিকায় কেক কাটা হবে দু’দলের ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে।
টিম মুম্বইও সচিনের জন্মদিন উদযাপনের ব্যবস্থায় নেমে পড়েছে। শোনা যাচ্ছে, তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসতে পারেন মুকেশ অম্বানীও। সন্ধেয় সিএবি থেকে বেরোনোর সময় মুম্বইয়ের মেন্টর অনিল কুম্বলেও বলে গেলেন, “আগামী বুধবার দিনটা সত্যিই খুব স্পেশ্যাল। আমরাও চাইছি সে দিন একটা স্পেশ্যাল কিছু করতে।” আর সেটা যে ‘মিস্টার ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’-কে রিটার্ন গিফট, বুঝতে অসুবিধা হয় না।
সচিনের দুপুর। হোটেলে ব্যস্ত মাছকে খাওয়াতে।—নিজস্ব চিত্র
শুধু মুম্বই কোচ জন রাইটই যা আবেগের মহাসমুদ্রে তেমন গা ভাসাতে পারছেন না। একমাত্র তাঁকে দেখেই মনে হবে, টিমটা দিল্লির কাছে দুরমুশ হয়ে এসেছে। দুপুরে লবিতে দাঁড়িয়ে টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কোচ বলেও ফেললেন, “পরপর দু’টো ম্যাচ হেরে যাওয়ায় একটু চাপে তো আছি ঠিকই। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে দিল্লি নয়, আমরা স্রেফ বীরুর কাছে হেরে গিয়েছি।”
সচিনের রান পাওয়া রাইটকে বিশেষ উদ্ভাসিত করছে না। বরং বলে দিচ্ছেন, “সচিন রান পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু দিল্লি ম্যাচটা তো আমরা জিততে পারিনি।” সোমবার শহরে পৌঁছে গোটা মুম্বই টিম আর ইডেনমুখো হয়নি। অধিনায়ক রিকি পন্টিং, দীনেশ কার্তিকরা গিয়েছিলেন। সন্ধে নাগাদ টিম মিটিংও ডাকেন রাইট। এবং কেকেআর ম্যাচ থেকেই টুর্নামেন্টে ‘ইউ টার্ন’ নিতে চান, সেটা সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন মুম্বই কোচ। বলে দিলেন, “আইপিএলের মতো একটা লম্বা টুর্নামেন্টে পরপর কয়েকটা ম্যাচ হেরে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে কেকেআরও খুব ভাল জায়গায় নেই। ওরাও চাপে আছে। আমাদের সেই ফায়দাটাই তুলতে হবে।”

সচিনের জন্মদিন এলেই আমাকে এই প্রশ্নটা এখন শুনতে হয়। ওর জন্য আপনার কী বার্তা? সচিন তো এক জন কিংবদন্তি। ওর সম্পর্কে নতুন করে আর কী বলব। এখনও আমার শারজার সেই ইনিংসের কথা মনে পড়ে। ও একাই হারিয়ে দিয়েছিল আমাদের। জন্মদিনে ওকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। তবে এটাও বলছি, চল্লিশের পর কিন্তু ব্যাপার স্যাপার আর সোজা থাকে না বন্ধু।
দিল্লি ম্যাচে সচিনকে ব্যাট করতে দেখলাম। ও মনে হয় ফর্মে ফিরছে। সচিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আমি আশা করব, ও আরও আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে। সচিনের ব্যাটিং দেখে তরুণ প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে পারবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.