নানা ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা যাতে রাতারাতি ঝাঁপ বন্ধ করতে না পারে সে জন্য সক্রিয় হল জেলার পুলিশ-প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ এলাকার ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। ওই সব সংস্থার স্থানীয় অফিসগুলির ম্যানেজার এবং এজেন্টদের নাম ও ফোন নম্বর জোগাড় করা হচ্ছে। প্রতিটি থানাতেই এক এসআইয়ের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
জেলার এক পুলিশকর্তার দাবি, সারদা-কাণ্ডের আগে মহকুমা স্তরে ওই সব অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এখন বৈঠক করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ওই সব সংস্থাগুলির ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করে রাখা হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে জেলায় অন্তত ৭০-৭৫টি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই কয়েকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি কাটোয়ার কাছারি রোডে সদ্য খোলা একটি সংস্থার দফতরও তার অন্যতম। সারদা-কাণ্ডের ধাক্কায় ইতিমধ্যেই অন্য সংস্থাগুলিতে টাকা জমা পড়ার হার কমে গিয়েছে। বেশির ভাগ সংস্থার এজেন্টদের দেখাও পাওয়া যাচ্ছে না। |
পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কাটোয়ার সার্কাস ময়দান-স্টেশন রোডে একটি সংস্থায় প্রতি দিন কয়েক লক্ষ টাকা জমা হত। সেখানে সোমবার অনেক কম টাকা জমা পড়েছে।” ওই সংস্থার প্রায় পাঁচ হাজার এজেন্ট রয়েছে কাটোয়ায়, এমন তথ্য পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদা-বিপর্যয়ের পর থেকেই নানা লগ্নি সংস্থায় গচ্ছিত রাখা টাকা তুলে নেওয়ার জন্য এজেন্টদের পীড়াপীড়ি করছেন লগ্নিকারীরা।
প্রশাসন তো বটেই, এজেন্টদের একাংশও এ ব্যাপারে চিন্তিত। তাঁদের দাবি, এই সব সংস্থাগুলিতে স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাতে অন্তত তাঁদের এখনকার মতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে না। একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট, কাটোয়ার মাধবীতলার বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র পান বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় আমাদের উপরে চাপ বাড়ে। সব সময়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।”
পুলিশ-প্রশাসনের অভিজ্ঞতা হল, সাধারণত কোনও বড় ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে তার পরেই ছোট সংস্থাগুলিও বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থার কর্তারা এলাকা থেকে পালিয়ে গেলে পুলিশও তাঁদের নাগাল পায় না। ফলে পুলিশ কোথাও প্রকাশ্যে, কোথাও গোপনে ওই সংস্থাগুলির সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করছে।
কেতুগ্রামের বাসিন্দা শঙ্কর দত্ত, কাটোয়ার সহজ কোঙারেরা বলেন, “পুলিশ কার্যত জনে-জনে জিজ্ঞাসা করে নানা সংস্থার কর্মী বা এজেন্টদের নাম জানতে চাইছে। তাদের নাম বলতে পারলে ঠিকানা ও ফোন নম্বরও চাইছে।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। আমরা সতর্ক আছি।” |