মারধর করে এজেন্টের বাড়ি ভাঙল ভুক্তভোগীরা
সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্টের বাড়ি ঘেরাও করে ভাঙচুর চালিয়ে তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠল। রবিবার শিলিগুড়ির কাছে সাহুডাঙ্গিতে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ, এদিনই তাঁদের জমা টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি তুলে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই এজেন্ট উদয় চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও করে আমানতকারীদের একাংশ। কিছুক্ষণ পরেই উত্তেজিত ওই বাসিন্দারা বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট হয়। তবে পুলিশের আশ্বাসেও শান্ত হয়নি আমানতকারীরা। শেষ পর্যন্ত ওই এজেন্ট উদয় চৌধুরী পুলিশের সামনে লিখিত ভাবে দু’মাসের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “পুলিশ পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে।”
সাহুডাঙিতে এজেন্টের বাড়িতে ঢুকতে চেয়ে বিক্ষোভ আমানতকারীদের।
অভিযুক্ত এজেন্ট উদয়বাবু জানান, তিনি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং নেতাদের সারদার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখে উৎসাহী হন। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই সংস্থায় অর্থ লগ্নির এজেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন। তাঁর বক্তব্য, “সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠতা দেখে বিশ্বাস করি যে এখানে কেউ টাকা রাখলে তা নষ্ট হবে না। তাই এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছি। এখন আমার বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে, আমাকে মারা হচ্ছে। এর দায়িত্ব কে নেবে? কী করব জানি না।” এ দিন সকালে অন্তত দেড়শো আমানতকারী সাহুডাঙ্গি বাজারে এজেন্ট উদয় চৌধুরীর বাড়ির সামনে জমা হন। উদয়বাবুকে ডেকে তাঁরা টাকা ফেরত চান। এখনই টাকা দেওয়া সম্ভব জানালে হইচই শুরু করেন ওই আমানতকারীরা। ঘরে ঢুকে চেয়ার টেবল ভাঙচুর শুরু করেন তাঁরা। বাধা দিতে গেলে উদয়বাবুকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এলাকারই কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি ওই পরিস্থিতি থেকে উদয়বাবুকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। তারা পরিস্থিতি শান্ত করতে আমানতকারীদের বোঝাতে গেলে তাঁরা কোনও কথাই শুনতে চাননি। উল্টে এ দিনই তাঁদের জমা টাকা উদয়বাবুকে ফেরত দিতে হবে বলে বারবার দাবি করে হইচই করতে থাকেন। ঝুঁকি না নিয়ে পুলিশ উদয়বাবুর বাড়ি ঘিরে ফেলে। পুলিশের সামনেই আমানতকারীরা উদয়বাবুর নাম করে গালিগালাজ করতে থাকেন। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকিও দিতে থাকেন কয়েক জন। পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। শেষ পর্যন্ত লিখিত ভাবে আশ্বাস দিতে হয় তাঁকে।
এজেন্টের বাড়িতে ভাঙচুর আমানতকারীদের।
আমানতকারীদের দাবি, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনেই তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ দিন তাই টাকা ফেরতের দাবিতে সাহুডাঙ্গি এলাকায় এজেন্ট উদয়বাবুর বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক আমানতকারী জ্যোৎস্না বর্মনের দাবি, তাঁর কাছ থেকে মাত্র ৪ দিন আগে ৫ লক্ষ টাকা জমা নিয়েছেন উদয়বাবু। জ্যোৎস্নাদেবী সামান্য মুড়ি বিক্রি করেন। তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। জমি বিক্রি করা টাকা তুলে দেন উদয়বাবুর হাতে। শীঘ্রই রসিদ দেবেন বলে জানালেও তিনি উদয়বাবুর কাছ থেকে এখনও তা পাননি বলে অভিযোগ। জ্যোৎস্না দেবী বলেন, “রসিদ না পাওয়ায় স্বামী বকাঝকা করছে। এ দিনই গিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে আসতে বলেন। টাকা না পেলে আত্মহত্যা করতে হবে।” জ্যোৎস্নাদেবী ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। সাহুডাঙ্গিরই অপর এক বাসিন্দা আনন্দ রায় ৯৫ হাজার টাকা রেখেছেন সারদা গোষ্ঠীর কাছে। তিনি টাকা না পেলে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আনন্দবাবু বলেন, ‘‘আমার মাসিক আয় ৫ হাজার টাকা। তার মধ্যেও মাসে ২ হাজার টাকা কষ্ট করে জমা করেছি। এখন টাকা ফেরত চাই। না হলে মরতে হবে।” ধীরেন রায় নামে চুটকিয়াভিটার এক বাসিন্দার কথায়, ব্যঙ্কে তিনি টাকা রেখেছিলেন। উদয়বাবু তাঁকে আশ্বাস দেন কোনও সমস্যা হলে তিনি আমাকে টাকা দেবেন। এর পরেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে তাঁর কাছে দিয়েছি। এখন পিছপা হলে তো হবে না।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.